রসুন খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা এবং অপকারিতা
আমাদের মধ্যে অনেক আছে যারা রসুন খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাই, তাই আজকে আমরা এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
প্রাচীনকাল থেকে রসুন বিভিন্ন রোগের ঔষধি উপাদান হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আর অনেকে রসুন খেয়ে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছে। কিন্তু রসুন থেকে ভালো গুনাগুন পেতে হলে রসুন খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। আমরা নিচে রসুন খাওয়ার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করেছি।
রসুন খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা এবং অপকারিতা
রসুন আমাদের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় একটি মসলা জাতীয় খাদ্য। রসুনে রয়েছে থিয়ামিন (ভিটামিন বি১), রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন বি২), নায়াসিন (ভিটামিন বি৩), প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫), ভিটামিন বি৬ ও ফোলেট (ভিটামিন বি৯)। আবার রসুনের মধ্যে সেলেনিয়াম জাতীয় একটি উপাদান রয়েছে যেটি ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রসুন খাওয়ার নিয়ম
- রসুন এমন এক মসলা জাতীয় খাদ্য এটি অনেক ভাবে খাওয়া যায়। তবে নিচের নিয়মগুলো অনুসরণ করলে ভাল ফলাফল পাবেন।
- রসুন কাঁচা খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। আপনি চাইলে রসুনকে মুড়ি, চিড়া সহ এই ধরনের আরো অনেক খাবার আছে যেগুলোর সাথে মিস করে কাঁচা খেতে পারেন।আপনি চাইলে রসুন কে সিদ্ধ করে খেতে পারেন, এই নিয়ন থেকেও ভালো গুনাগুন পাওয়া যায়।
- আবার আপনি চাইলে রসুনকে কিজিয়ে রেখে রসুনের পানি খেতে পারেন। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এটি একটি পরীক্ষিত পদ্ধতি।
রসুন খাওয়ার উপকারিতা
আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছেন যে রসুনের মধ্যে অনেক রকমের ভিটামিন রয়েছে। রসুন খাওয়ার ফলে এ ভিটামিন গুলো আমাদের অনেক উপকারে আসে। এখন আমরা রসুন খাবার উপকারিতা সম্পর্কে জানব।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
রসুনের মধ্যে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিফাঙ্গাল নামে দুটি উপকরণ রয়েছে যা রসুনকে ঔষধি উপাদান হিসেবে তৈরি করতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। আর এই উপাদান দুটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। তাই আমাদের প্রয়োজন প্রতিদিন কমপক্ষে দুই কোয়া রসুন খাওইয়া। খালি পেটে রসুন খেলে সবথেকে বেশি উপকারীতা পাওয়া যায়।
- রক্ত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে
রসুন রক্ত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। আর রক্ত পরিষ্কার রাখার জন্য আমাদের প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন নিয়ে গরম পানি করে রসুন মিস করে ওই পানি গুলো খেয়ে নিতে হবে। আর এই প্রক্রিয়াটি আমাদের ত্বক ভালো রাখতেও অনেক সাহায্য করে।
- যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
আমাদের মধ্যে অনেক লোক রয়েছে যারা যৌন ক্ষমতায় খুব দুর্বল তাদের জন্য রসুন খুব উপকারী একটা ঔষধ। কারণ রসুন যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই আমাদের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কমপক্ষে প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন খাওয়া প্রয়োজন।
- ওজন কমাতে সাহায্য করে
যাদের ওজন বেশি তাহারা প্রতিদিন সকালে দুই কোয়া রসুন নিয়ে এক গ্লাস গরম পানিতে মিশিয়ে তারপর সেই পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন, এটি আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
- হৃদপিণ্ড শক্তিশালী করে
যাদের হৃদপিন্ডে সমস্যা অথবা বুকে ব্যথা রয়েছে তাহারা প্রতিদিন সকালে দুই কোয়া রসুন পানির সাথে খেয়ে ফেলুন এতে করে আপনার হৃদপিণ্ড শক্তিশালী হবে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
রসুনের মধ্যে সেলেনিয়াম ও অ্যালিসিন নামে দুটি টি উপকরণ রয়েছে যেগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য আপনাকে প্রতিদিন রান্নাকরে অথবা কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
আরো জানুন রসুন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে:
- হৃদরোগ থেকে মুক্তি দেয়।
- জ্বর, সর্দি ও কাশি নিরাময় করতে সাহায্য করে।
- রক্তসঞ্চালনতা বাড়ায়।
- উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
- শারীরিক শক্তি বাড়ায়।
- সেল ড্যামেজ রোধ করে।
- ত্বক ভালো রাখে।
কাঁচা রসুন খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
কাঁচা রসুনের উপকারিতা রান্না করা রসুন এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। কাঁচা রসুনের মধ্যে মিনারেল ও ভিটামিন ভরপুর থাকে, এজন্য আমরা বেশি বেশি কাঁচা রসুন খাওয়ার অভ্যাস করব।
এখন আমরা কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানব।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
প্রতিদিন সকালে উঠে দুই কোয়া কাঁচা রসুন খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কারণ রসুনের মধ্যে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিফাঙ্গাল এনজাইম রয়েছে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
- উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে
রসুন উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। যখন কোন ব্যক্তির শরীরে এলডিএলের পরিমাণ বাড়তে থাকে তখন ওই ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপও বাড়তে থাকে। আর প্রতিদিন সকালে দুই কোয়া কাঁচা রসুন খেলে ব্যক্তির শরীরে এলডিএলের পরিমাণ কমে যায় এবং উচ্চ রক্তচাপ থেকে মুক্তি পায়।
- ফুসফুসের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়
ফুসফুসের সমস্যা একটি মারাত্মক ধরনের সমস্যা, কারণ যে ব্যক্তি এই সমস্যায় পড়ে তার শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনি প্রতিদিন সকালে কাঁচা রসুনের রস খেতে হবে।
- হাড় মজবুত করে
প্রতিদিন সকালে দুই কোয়া কাঁচা রসুন খেলে শরীরে ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যা আমাদের শরীরের হাড়গুলো মজবুত করতে সাহায্য করে।
- কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে
যাদের কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি তারা প্রতিদিন দুই কোয়া কাঁচা রসুন খেলে কোলেস্টেরল এর পরিমান কমে যায়।
রাতে রসুন খাওয়ার উপকারিতা
- রাতে রসুন খেলে কোলেস্টেরল এর পরিমাণ খুব তাড়াতাড়ি কমে যায়।
- রসুনের মধ্যে যে আন্টি-ওবেসিটি রয়েছে সেটি আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং আমাদের শরীরের মধ্যে চর্বি জমতে দেয়না। রাতে খেলে এর বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়।
- যাদের ঠান্ডা ও জ্বর তারা রাতে দুই কোয়া রসুন খেলে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে।
রাতে রসুন খেলে শরীরের হাড় মজবুত হয়। - রাতে ঘুমানোর আগে দুই কোয়া রসুন খেলে রসুনের থাকা এন্টিমাইক্রোবিয়াল আমাদের দাঁতের ভিতরে লুকিয়ে থাকা ক্যাভিটি দূর করতে সাহায্য করে। এবং আমাদের দাঁতের মাড়িকে সুরক্ষিত রাখে।
- প্রতিদিন রাতে রসুন খেলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। রসুনে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
মধু ও রসুন এর উপকারিতা
রসুন ও মধু দুইটি উপকারী উপাদান। যখন আমরা একসাথে মধু ও রসুন মিক্স করে খায় তখন এটা আমাদের জন্য আরো বেশি উপকারী হয়ে উঠে।
মধু ও রসুন একসাথে মিক্স করে খেলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, জ্বর সর্দি -কাশি থেকে মুক্তি পাব, হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে, ক্লান্তি থেকে মুক্তি পাবো।এছাড়াও আরো অনেক ধরনের উপকারিতা রয়েছে।
মধু ও রসুন খাওয়ার নিয়ম
মধু ও রসুন আমাদের জন্য অনেক উপকারী এইটা আমরা সবাই জানি, কিন্তু এই উপকরণ দুটি কিভাবে খেতে হয় তা আমরা জানিনা।
এখন আমরা রসুন ও মধু খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানব-
১ টেবিল চামচ মধুর সাথে মাঝারি আকারের ৩-৪ টা রসুনের কোয়া কুচি কুচি করে কেটে মিক্স করে ফেলতে হবে। এরপর প্রতিদিন সকালে একবার করে এই মিশ্রণটি খেতে থাকুন দেখবেন আপনার শরীরে কোন ক্লান্তি অনুভব হচ্ছে না এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
রসুন খাওয়ার অপকারিতা
রসুন আমাদের জন্য যেমন উপকারী তেমনি এর কিছু ক্ষতিকারক দিকও রয়েছে। অতিরিক্ত রসুন খেলে শরীরে এর অনেক ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এখন আমরা রসুন খাওয়ার ফলে যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় সেই সম্পর্কে জানবঃ
- অতিরিক্ত রসুন খেলে শরীরে রক্তচাপ কমে যেতে পারে, এর ফলে ব্যক্তির দুর্বলতা বেড়ে যায় এবং মাথা ঘুরানো ও বমি বমি ভাব সৃষ্টি হতে পারে।
- গর্ভবতী মহিলাদের রসুন সেবন করা উচিত নয় কারণ তারা রসুন সেবন করলে তাদের প্রসব বেদনা বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও যাদের শিশু এখনো দুধ পান করে তাদের রসুন খাওয়া উচিত নয় কারণ রসুন সেবনের ফলে বুকের দুধের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়।
- রসুনের মধ্যে সালফার থাকায় অতিরিক্ত রসুন সেবন করলে ডায়রিয়া সৃষ্টি হতে পারে।
- বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষায় দেখা গেছে যে অতিরিক্ত রসুন সেবনের ফলে শরীরে ঘাম এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং শরীর থেকে ঘাম ঝরতে থাকে।
- রসুন সেবনের ফলে মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।
আমাদের শেষ কথা
রসুন খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে এজন্য আমাদেরকে নিয়ম অনুযায়ী রসুন খেতে হবে । নিয়ম অনুযায়ী রসুন খেলে এর থেকে ভালো ফলাফল পাওয়া যায় এবং অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
তবে আমাদের মধ্যে যাদের কোন প্রকার সমস্যা রয়েছে অথবা কোন ধরনের অসুখে ভুগছেন তাহারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রসুন খাবেন। কারণ রসুনের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। অতিরিক্ত রসুন সেবন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রসুন খাওয়ার চেষ্টা করুন।
আরো জানুন:-