খেজুর খাওয়ার উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম
আমরা সবাই খেজুরের সাথে খুব পরিচিত। খেজুর আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী একটা উপাদান। খেজুর খাওয়ার ফলে আমরা অনেকে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাই। নিয়মানুযায়ী খেজুর খেতে জানলে এর উপকারিতা বেশি পাওয়া যায়। আজকে আমরা খেজুর খাওয়ার উপকারিতা, অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানব।
খেজুরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, শর্করা, ফাইবার, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস,পটাশিয়াম সহ আরো অনেক কার্যকরী উপাদান। এগুলো আমাদের শরীরে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে এবং অনেক রোগ থেকে মুক্তি দেয়।
খেজুর খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
নিয়ম অনুযায়ী খাদ্য খেতে পারলে এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী হয়ে উঠে। এখন আমরা খেজুর খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জানব।
- শরীরে শক্তি যোগায়
আমরা সারাদিন কাজকাম করার ফলে আমাদের শরীর থেকে অনেক শক্তি ব্যয় হয়, এজন্য প্রতিদিন ৪-৫ টা খেজুর খেলে খেজুরে থাকা উপকরণ গুলো আমাদের খুব দ্রুত শক্তি ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করে।
- হাড় মজবুত করে
খেজুরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ বিদ্যমান যা হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। এজন্য যাদের হাড়ের দুর্বলতা রয়েছে তারা প্রতিদিন ৪-৫ টা খেজুর খাবেন।
কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ থেকে মুক্তি দেয়
যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ রয়েছে তারা এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রতিদিন ৪-৫ টা খেজুর খেতে পারেন। ৪-৫ টা খেজুর বিজিয়ে রাতে অথবা সকালে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
- ওজন বাড়াতে সাহায্য করে
আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা ওজন বাড়ানোর জন্য উপায় খুঁজছে তারা প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি ৪-৫ টা পুষ্টিকর খেজুর খেতে পারেন। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালোরি যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
- উচ্চ রক্তচাপ কমায়
খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তারা প্রতিদিন ৪-৫ টা খেজুর খেতে পারেন।
- স্কিন সুন্দর রাখে
পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খেজুরের মধ্যে যে উপকরণগুলো রয়েছে সেগুলো স্বাস্থ্যের পাশাপাশি স্কিন সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। এজন্য আপনাকে প্রতিদিন সকালে ৪-৫ টা খেজুর খালি পেটে খেতে হবে।
- দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে
খেজুরের মধ্যে থাকা ভিটামিন এ, জিয়াজেনটিন ও লিউটিন চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং চোখের রেটিনা কে ঠিক রাখে।
এছাড়াও খেজুরের থাকা ভিটামিন-এ রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করেএজন্য প্রতিদিন রাতে ৪-৫ টা খেজুর খেতে হবে।
আরো জানুন খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কেঃ
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- পাকস্থলীকে সুস্থ রাখে।
- হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে ।
খেজুর ও কিসমিস এর উপকারিতা
- এক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত খেজুর খাওয়ার ফলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- কিসমিসে থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম আমাদের শরীরে এসিডিটির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
- বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কিসমিস ও খেজুর একসাথে খেলে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
- খেজুর ও কিসমিসে থাকা আয়রন লোহিত রক্ত কণিকা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং অ্যামোনিয়াম রোগের প্রকোপ কমায়।
- খেজুর ও কিসমিস এ থাকা উপকরণ গুলো মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই যাদের স্মৃতি শক্তি বা ব্রেইন ক্ষমতা কম তারা প্রতিদিন নিয়মিত খেজুর ও কিসমিস খেতে পারেন।
- খেজুরে থাকা উপকরণ গুলো শরীরের খারাপ ক্লোরেস্টল এর মাত্রা কমিয়ে দেয় যা আমাদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
খেজুর খাওয়ার অপকারিতা
সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
সকালে খালি পেটে খেজুর খেলে এটি আমাদের জন্যে খুব উপকারী হয়ে উঠে। কারণ সকালে খালি পেটে খাজুর খাওয়া সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়ার ফলে যে উপকার পাওয়া যায় তা হলঃ
- খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
- প্রোটিন সরবরাহের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
- শরীরে ভিটামিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
- আয়রনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
- ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
- ওজন কমাতে সহায়তা করে ।
- শিশুদের মারি মজবুত করতে সাহায্য করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- রক্তশূন্যতা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
- হূদরোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
মধু ও খেজুরের উপকারিতা
- মধু ও খেজুর একসাথে মিস করে খাওয়ার ফলে শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- মধু ও খেজুর খাওয়ার ফলে গলার সর সুন্দর হয় এবং তারুণ্য বজায় থাকে।
- মধু ও খেজুর একসাথে খাওয়ার ফলে হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট দূর হয়।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি ও দেহের পানিশূন্যতা দূর করে।
- যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে।
- দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।
আমাদের শেষ কথা
আমরা পুষ্টিগুণে ভরপুর খেজুর বেশি খাওয়ার চেষ্টা করব। কারণ খেজুরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায় এবং এটি অনেক রোগ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। আর এটি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর প্রিয় খাবার ছিল।
যাদের শরীরে ডায়াবেটিস ও পটাশিয়াম এর পরিমান বেশি তারা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এই ফল খেতে হবে।
আরো জানুন:-