কালোজিরার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

কালোজিরার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

কালোজিরা আমাদের সকলের সুপরিচিত একটি নাম। কালোজিরার আরো বেশকিছু নাম রয়েছে। যেমনঃ কাল কেওড়া, নিজলা, ফিমেল ফ্লাওয়ার, রোমান দনে ও কালঞ্জি। এটিকে আপনি যে কোন নামে ডাকতে পারেন, তবে এটি সাধারণত কালোজিরা নামে বেশি পরিচিত।

কালোজিরা যেকোনোভাবে খাওয়া যায় তবে এমন কিছু নিয়ম রয়েছে যে নিয়ম অনুসরণ করে কালোজিরা খেলে বেশ ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। আজকে আমরা কালোজিরার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব।

কালোজিরার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

১৫ টি অ্যামাইনো এসিড সমৃদ্ধ কালোজিরা আমাদের জন্য খুব উপকারী। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ কালোজিরায় প্রোটিনের পরিমান ২১ শতাংশ, শর্করা ৩৮ শতাংশ এবং স্নেহ জাতীয় পদার্থ ৩৮ শতাংশ রয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য ভিটামিন এই কালোজিরার মধ্যে রয়েছে।

ইসলামে কালোজিরা খাওয়ার উপর ক্ষোভ গুরুত্ব দিয়েছে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, ” কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের উপশম”। 

এখন আমরা প্রথমে কালোজিরার উপকারিতা এবং পরে কালোজিরা খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও সময় সম্পর্কে জানব।

কালোজিরার উপকারিতা

আমাদের সুস্থ থাকার জন্য সকল মূল উপাদান কালোজিরার মধ্যে রয়েছে।  এখন এমন কিছু পরিচিত রোগ নিয়ে আলোচনা করব যেগুলোর ঔষধ হিসেবে কালোজিরা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  • কোলেস্টেরল কমায়ঃ

JMCM (Journal Of Family and Community Medicine) এর ২০১২ তে একটি ও NCBI (National Center for Biotechnology Information) এর ২০১৬ ও ২০১৭ তে দুইটি আর্টিকেল প্রকাশিত হয় কোলেস্টেরল কমাতে কালোজিরার ভূমিকা নিয়ে। আর এই তিনটি গবেষণা থেকে দেখা গেছে কালোজিরা খারাপ কোলেস্টেরল LDLও Triglycerides কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল HDL বাড়ায়। এই থেকে আমরা বুঝতে পারি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে কালোজিরার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  • ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ 

NCBI ও U.S National Library of Medicine (NIH) এর গবেষণা অনুযায়ী দেখা যায় কালোজিরার শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার ব্লাড ক্যান্সার, প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার, লাং ক্যান্সার, সার্ভিকাল ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, স্কিন ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সার এর সম্ভাবনা কমায়। ক্যান্সার প্রতিরোধে আপনি প্রতিদিন পরিমাণমতো কালোজিরা খেতে পারেন।

  • লিভারকে রক্ষা করেঃ

লিভার আপনার শরীরের অপকারী পদার্থগুলো থেকে আপনাকে রক্ষা করে। আর কালোজিরা খেলে আপনার লিবিয়ার সচল থাকে, তাই লিভারকে সচল রাখার জন্য প্রতিদিন নিয়মিত কালোজিরা পান করা প্রয়োজন।

  • ব্লাড সুগার কমায়ঃ 

আমরা অনেকগুলো গবেষণা থেকে দেখত পাই কালোজিরা ফাস্টিং ব্লাড সুগার, অ্যাভারেজ ব্লাড সুগার কমানোর সাথে সাথেই ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমায়।

  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কালোজিরা ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস পানির সাথে এক চা চামচ কালোজিরা মিশিয়ে খাবেন দেখবেন আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

আরো জানুনঃ ডায়াবেটিস কি? কেন হয়? বাঁচার উপায় কি?

আরো জানুন কালোজিরার উপকারিতা নিয়ে

  • স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে।
  • মাথা ব্যথা নিরাময় করে।
  • জ্বর সর্দি কাশি থেকে রক্ষা করে।
  • বাতের ব্যথা ব্যাথা দূর করে।
  • হার্টের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে।
  • পাইলসের সমস্যা নিরাময় করে।
  • শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি থেকে রক্ষা করে।
  • যৌন সমস্যা সমাধান করে।
  • অনিয়মিত মাসিক থেকে রক্ষা করে।
  • বুকের দুধ বৃদ্ধি করে।
  • আমাশা নিরাময় করে।
  • শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি করে।

কালোজিরার তেলের উপকারিতা

কালোজিরার তেল আমাদের অনেক উপকারে আসে। এখন আমরা কালোজিরার তেলের উপকারিতা সম্পর্কে জানব।

  • আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • আমাদের স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • হৃদরোগজনিত সমস্যার আশঙ্কা কমায়।
  • আমাদের মধ্যে যাদের  সর্দি রয়েছে সাধারণত তাদের নাক ডিবে থাকে, তারা যদি তখন দুই নাকে দুই ফোঁটা কালোজিরার তেল ব্যবহার করে তাহলে তাদের নাক আর ডিবে থাকবে না।
  • বরণ হলে কালোজিরার তেল ব্যবহার করলে অতি দ্রুত তা চলে যায়।
  • ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার এর মতন রোগের কোষ ধ্বংস করতে কালোজিরার তেল ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
  • যাদের পেট ব্যাথা করে তারা দুই-তিন ফোঁটা কালোজিরার তেল খেলে ব্যাথা ব্যাতা সেরে যায়।
  • কালোজিরার তেল দিয়ে মাথা মালিশ করলে মাথা ব্যথা চলে যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন চোখে না লাগে।
  • যাদের মাথার চুল উঠে যায় তারা কালোজিরার তেল ব্যবহার করতে পারেন। কারণ কালোজিরার তেল ব্যবহার করলে চুলের গোড়া মজবুত হয়।
  • মাথার চুল কালো করতে কালোজিরার তেল ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।

আরো জানুনঃ চুল পড়া বন্ধ করার সহজ কিছু উপায়

 মধু ও কালোজিরার উপকারিতা

প্রায় 5 হাজার  বছর পূর্বে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে মধু ও কালোজিরার উপকারিতা নিয়ে বলা হয়েছে।

কালোজিরায় রয়েছে অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট যা রোগ জীবাণু ধ্বংসকারী উপাদান এই উপাদানটির কারণে আমাদের শরীরে কোন রকমের সংক্রামন বা ছোঁয়াচে রোগ হয় না।

মধু আমাদের সকলের পরিচিত একটি নাম। মধুতে রয়েছে প্রায় ৪৫ টির ও বেশি খাদ্যগুণ, তবে এর মধ্যে কোন চর্বি ও প্রোটিন নেই। মধুতে এন্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এই দুটি উপাদান রয়েছে, যা আমাদের যে কোনো সংক্রমণ রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।

মধু কালোজিরা মিশিয়ে খেলে আমরা যে উপকার পাবো তা হলোঃ

  • হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে।
  • ঠান্ডা জনিত যেকোনো ধরনের রোগ থেকে খুব তাড়াতাড়ি সাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত কালোজিরা ও মধু খেলে শরীরের যেকোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্বদেশ রাখে।
  • আমাদের শরীরের যেকোনো ধরনের রোগ-জীবাণু থেকে রক্ষা করে।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত কালোজিরা ও মধু খেলে আমাদের স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • আমাদের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত কালোজিরা ও মধু খেলে পুরুষের স্পাম সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তি দেয়।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ যাদের ডায়াবেটিস বেশি তারা মধু পান করা থেকে বিরত থাকুন।

কালোজিরা খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও সময়

আমরা সকলেই জানি কালোজিরা ও মধু আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কিন্তু আমরা মধু ও কালোজিরা খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানিনা যার কারণে আমরা এর কোনো উপকার পাই না। তাই আমরা এর উপকার পেতে হলে পরিমান মত সঠিক নিয়মে তা খেতে হবে।

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পানি খাওয়ার আধাঘন্টা পর কালোজিরার ২১ টি দানা নিয়ে এক চামচ মধু মিশিয়ে একমাস খেতে থাকুন, দেখবেন আপনি ভালো ফলাফল পাচ্ছেন।

কালোজিরা তেলের ছবি

কালোজিরা তেলের ছবি

অনেকে কালোজিরা তেলের ছবি দেখতে চাই তাই তাদের জন্য কালোজিরা তেলের ছবি দেওয়া হল। কালোজিরা তেলের দাম ৪২৫ টাকা।

হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন কালোজিরা মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ঔষধ। এই থেকে আমরা বুঝতে পারি যে কালোজিরা আমাদের জন্য কতইনা উপকারী।

তাই আমাদেরকে প্রতিদিন কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। তাই আমরা আমাদের শরীরে কোন রোগ জীবাণু দেখা দেওয়ার আগে বেশি বেশি কালোজিরা খাওয়ার চেষ্টা করি, তাহলে আমাদের শরীরে আর কোনো ধরনের অসুস্থতা দেখা দিবেনা।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url