আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা-চুল পড়া বন্ধের জন্য আমলকির ব্যবহার
আমলকি সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি জেনে থাকি। তবে আমলকির উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের অনেকের তেমন একটা ধারনা নেই। তাই আজকে আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব।
আমলকি ভেষজ গুণে ভরপুর একটি ফল। আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি পাওয়া যায়। আমলকি কে ভিটামিন সি এর রাজা বলা হয়। কারণ আমলকিতে আঙ্গুরের চেয়ে ১৫০ গুণ, আপেলের চেয়ে ১২০গুণ, কলার চেয়ে ৬০গুণ, কমলার চেয়ে ২০ গুণ এবং আমের চেয়ে ২৪ গুণ বেশি ভিটামিন সি পাওয়া যায়। তাই আমাদের সকলের প্রয়োজন নিয়মিত আমলকি খাওয়া।
বাংলাদেশে প্রায় ৯০% লোক ভিটামিন সি এর অভাবে ভোগে। এর কারণ হচ্ছে রান্নার ফলে ভিটামিন সি নষ্ট হয়ে যায়। এই ব্লগ পোস্টে, আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেছি, যাতে আপনি এর স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করতে পারেন।
আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
আপনি যদি আমলকির অনেক উপকার পেতে চান, তাহলে আপনাকে এটি খাওয়ার নিয়ম জানতে হবে। আমলকি, বা ভারতীয় গুজবেরি, বহু শতাব্দী ধরে আয়ুর্বেদিক ওষুধে বদহজম এবং ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে উচ্চ রক্তচাপ এবং চুল পড়া পর্যন্ত প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এখানে আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
আমলকি বা আমলক একটি প্রাকৃতিক ফল যা আমলাকী বৃক্ষ (Emblica officinalis) থেকে প্রাপ্ত হয়। এটি ভারত, স্রীলঙ্কা, পাকিস্তান এবং নেপালে পাওয়া যায়। আমলকি ফলের গুণগত মান খুবই বিশিষ্ট এবং এটি বিভিন্ন উপকারিতা সম্পন্ন ফলস্বরূপ।
নিম্নলিখিত হল কিছু আমলকি খাওয়ার উপকারিতা:
- প্রতিরোধশীলতা উন্নতি: আমলকি প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্ট যা বিভিন্ন শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ভিটামিন সি, গ্যালিক এসিড এবং ইমিডিয়াবল পাতা সহ সমৃদ্ধ করে। এটি মহাকাশায় মুক্ত রেখে আপনার প্রতিরোধশীলতা বৃদ্ধি করে এবং ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং অন্যান্য সংক্রমণকারী পথী বিরুদ্ধে রক্ষার ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
- শরীরের সমস্যার চিকিৎসা: আমলকি উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন সি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হয়ে থাকার জন্য এটি বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি স্বাস্থ্যকর চর্মরোগ, চোখের সমস্যা, স্নায়ুতন্ত্র সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, আমলকিপাক ও ডায়াবেটিস সহ অনেক সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
- মজার ত্বকের স্বাস্থ্যকর কার্যক্রম: আমলকি ত্বকের জন্য খুবই উপকারী হতে পারে। এটি ত্বকের রং উজ্জ্বল রাখতে সহায়তা করে, ত্বকের ঝুরু, দাগ এবং সমস্যায় কমু করে এবং ত্বকের ক্ষমতা ও সুন্দরতা বাড়াতে সহায়তা করে। এছাড়াও, এটি ত্বকের ধুলো ও অধিকমাত্রায় ত্বকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং চিকন ও নরম করে তুলে ধরে।
- ডায়াবেটিস প্রতিরোধ: আমলকি ডায়াবেটিস এর প্রতিরোধে বিশেষ ক্ষমতা রাখে। এটি ইনসুলিন স্তর নিয়ন্ত্রণ করে, রক্তশর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তে গ্লুকোজ অবশিষ্ট স্তর কমিয়ে তুলে ধরে।
- হৃদরোগ প্রতিরোধ: আমলকি হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে কারণ এটি কোলেস্টেরল স্তর নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদমূত্রের ক্ষমতা উন্নত করে।
আমলকি খাওয়ার অন্যান্য উপকারিতা
- ভিটামিন সি-তে ভরপুর এই ফল আপনার ইমিউনিটিকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে।
- পেটের জন্য ভালো এবং ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম কমাতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
- ট্রাইগ্লিসারাইড ও খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে হার্টকে সুরক্ষিত রাখে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
- চোখকে সুরক্ষিত রাখে এবং ম্যাকুলার ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করে।
- বহুগুণ সমন্বিত আমলকি ত্বককে পরিপুষ্ট করে এবং চুল পড়া রোধ করে।
- নরএপিনেফ্রিইন ক্ষরণের মাধ্যমে সচেতনতা এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
আমলকি খাওয়ার নিয়ম
আমলকি ফল খাওয়ার নিয়মগুলি নিম্ন দেওয়া হল:
- প্রাকৃতিক আমলকি ফল বেশ কয়েকটি ভাবে খাওয়া যায়। এটি ফ্রেশ অবস্থায় খাওয়া যেতে পারে বা তা বিভিন্ন ফর্মে ব্যবহার করা যেতে পারে যেমন রস, আচার, চুটনি বা স্যুপের রূপে।
- প্রাকৃতিক ফল বা আমলকি স্বাদমতো ও সহজে খাওয়া যায়। আপনি প্রতিদিন একটি ফল খাতে পারেন বা এটি প্রস্তুত করে নিতে পারেন যেমন আমলকি জূস।
- প্রাকৃতিক আমলকি ফল অন্যান্য ফল বা খাবার সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। এটি ফলের রুপে খাওয়া যায় বা স্মুদ্র করে পাউডার বা টিকিয়া হিসেবে অন্যান্য খাবারে যুক্ত করা হয়।
- আমলকি পাউডার বা আমলকি আবির ব্যবহার করে এটি সরাসরি দ্রবীভূত পদার্থে মিশিয়ে নিতে পারেন যেমন দুধ, মিশ্রণ জুস, স্মুদ্র বা আচারের সাথে।
- প্রতিদিন প্রাকৃতিক আমলকি ফল খাওয়া উচিত যতটা সম্ভব। আমলকি একটি স্বাস্থ্যকর ফল যা দৈনন্দিন জীবনে একটি স্বাভাবিক অংশ হিসেবে যুক্ত করা উচিত।
খালি পেটে আমলকি খেলে যে উপকার হয়
আমাদের সকলের জানা হয়ে গেছে আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে। তবে খালি পেটে আমলকি খেলে আমাদের শরীরে অনেক ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। খালি পেটে আমলকি খেলে যে সকল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এখন আমরা তা জানব।
- সর্দি কাশি প্রতিরোধ করে।
- দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়।
- মেদ কমায়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- চুল সুন্দর করে।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ত্বক সুন্দর করে।
- কোলেস্টেরল দূর করে।
- অনেক ধরনের ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়।
চুল পড়া বন্ধের জন্য আমলকির ব্যবহার
চুল পড়া বন্ধের জন্য আমলকি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর বাজারে অনেক ধরনের আমলকির তেলও পাওয়া যায়। আমাদের যাদের বেশি চুল পড়ে তারা আমলকি তেল ব্যবহার ব্যবহার করতে পারেন। আমলকি তেল ব্যবহার করলে চুলের খুশকি দূর হয় এবং চুলের গোড়া মজবুত হয়।
আমলকি দইয়ের হেয়ার মাক্স ব্যবহার করে চুল পড়া কমানো যায় খুব সহজে। আমাদের যাদের অতিরিক্ত চুল পড়া নিয়ে সমস্যায় তারা আমলকি দইয়ের হেয়ার মাক্স ব্যবহার করতে পারেন। আমলকি দইয়ের হেয়ার মাক্স তৈরির জন্য প্রথমে দুই চা-চামচ আমলকীর গুঁড়া নিতে হবে। তারপর সামান্য পরিমাণ গরম পানি নিয়ে আমলকীর গুঁড়ার সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর দুই চা চামচ টকদই ও এক চা চামচ মধু নিয়ে, উপকরণগুলো কে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
এভাবে যদি আমরা আমলকি হেয়ার মাক্স তৈরি করে মাথা মাথার চুলে ব্যবহার করি তাহলে আমাদের চুলের গোড়া মজবুত এবং চুল পড়া বন্ধ হবে। যাদের অতিরিক্ত চুল পড়ে তারা এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে পারেন।
শুধুমাত্র আমলকির রস মাথার চুলে ব্যবহার করেও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তবে এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করলে মাথার চুল ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
আমলকির অপকারিতা
আমলা, ভারতীয় গুজবেরি নামেও পরিচিত, একটি ফল যা সাধারণত ভারতে খাওয়া হয় এবং এর স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য বিখ্যাত। যাইহোক, যেকোনো খাবারের মতো, আমলা খাওয়ার সাথে যুক্ত কিছু অসুবিধা হতে পারে, যা হল:
- অ্যালার্জি: কিছু লোকের আমলা থেকে অ্যালার্জি হতে পারে, যার ফলে চুলকানি, আমবাত এবং ফোলা লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
- দাঁতের সমস্যা: অত্যধিক আমলা খাওয়ার ফলে দাঁতের সমস্যা যেমন এনামেল ক্ষয় বা দাঁতের বিবর্ণতা হতে পারে, এর উচ্চ অ্যাসিড উপাদানের কারণে।
- পেটের সমস্যা: আমলা তার রেচক বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত, যা কিছু লোকের ডায়রিয়া এবং পেটে ব্যথা হতে পারে, বিশেষ করে যখন বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়।
- ওষুধের সাথে হস্তক্ষেপ: আমলা কিছু ওষুধের সাথে যোগাযোগ করতে পারে, বিশেষ করে রক্ত পাতলা করে এবং রক্তপাত বা ঘা হওয়ার মতো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
- হাইপোগ্লাইসেমিয়া: আমলা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পরিচিত, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে, তবে কিছু লোকের হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে, বিশেষ করে যদি বেশি পরিমাণে খাওয়া হয়।
পরিমিতভাবে আমলা খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনার যদি কোনো অন্তর্নিহিত চিকিৎসা সংক্রান্ত অবস্থা বা আমলা খাওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ থাকে তবে একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করুন।