ব্রণের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়ার উপায়

ব্রণের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়ার উপায়

অনেক লোক রয়েছে যারা ব্রণের সমস্যায় পরে খুব চিন্তিত। কারণ ব্রণ মানুষের চেহারার সৌন্দর্যকে নষ্ট করে ফেলে। তাই আজকে আমরা ব্রণের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

সাধারণত আমাদের মুখের যে ছিদ্র থাকে ওইগুলো যখন  ভরে যায় তখন  আমাদের শরীরের ভিতর থেকে অয়েল-সিক্রেশন হতে পারে না। অর্থাৎ, আমাদের শরীরের ভিতর থেকে ছিদ্র দিয়ে তেল বাহির হতে পারে না, তখন ওই স্থানে ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয় ফলে ওই স্থান ফুলে ব্রণে পরিণত হয়।

 ব্রণের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়ার উপায়

ব্রণ কেন হয় এবং এর থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়ার জন্য আপনাকে যে সতর্কতাগুলো অবলম্বন করতে হবে তা নিচে আলোচনা করা হলোঃ

  • ব্যবহার করা মোবাইল ফোন পরিস্কার রাখতে হবে

আমরা যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করি সে মোবাইল ফোন সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। কারণ মোবাইল ফোনে ময়লা থাকলে মোবাইলে কথা বলার সময়  ময়লা গুলো আমাদের মুখের মধ্যে লেগে যায়, এর ফলে আমাদের মুখের মধ্যে ব্যাকটেরিয়ার জন্ম নিয়ে ব্রণের সৃষ্টি হয়।

এজন্য ব্রণের থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা সবসময় ব্যবহার করা মোবাইলটি পরিষ্কার রাখতে হবে।

  • মুখ সব সময় পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে

মুখ সব সময় পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। আমাদের মধ্যে অনেকে আছে সারাদিনে তেমন একটা মুখ পানি দিয়ে পরিষ্কার করে না। এর ফলে তাদের মুখের মধ্যে ধুলাবালি পড়ে মুখে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় আর তাদের মুখে ব্রণ উঠা শুরু করে।

এইজন্য আমরা যখন বাইরে যাব বা কোন কাজ করব কাজ শেষ করার সাথে সাথে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিবো এতে করে আমাদের মুখে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারবে না এবং আমরা ব্রণ থেকে মুক্তি পাবো।

  • মেকআপ করার পর মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে

মেয়েরা বেশির ভাগ সময় মুখে মেকআপ করে থাকে আর এই মেকআপ একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি করে। এজন্য মেকআপ করার পর বেশিক্ষন না রেখে নির্দিষ্ট সময় পর পানি দিয়ে ভালোভাবে মুখ দিয়ে নিন। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর আগে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ঘুমাবেন।

  • মুখে ঘনঘন হাত দেওয়া যাবেনা

অনেকে আছে যারা সব সময় মুখের মধ্যে হাত দিতে থাকে এতে করে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। আবার আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কাজের সময় হাতে ময়লা থাকা অবস্থায়ও মুখে ঘনঘন হাত দেয় এতে করে তাদের ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই মুখের মধ্যে ঘনঘন হাত দেওয়া যাবেনা।

  • ব্যবহার করা বালিশ পরিষ্কার রাখতে হবে

আমাদের ব্যবহার করা বালিশ সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে, কারণ আমরা ঘুমানোর সময় আমাদের মুখ বালিশের সাথে লেগে থাকে। বালিশের মধ্যে ময়লা থাকলে মুখে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়। এজন্য যাদের ব্রণ আছে এবং যাদের ব্রণ নাই সবাই ব্রন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বালিশ পরিষ্কার রাখবেন।

  • সূর্যের কড়া রোদ থেকে দূরে থাকতে হবে

সূর্যের কড়া রোদ আমাদের মুখের ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। এজন্য ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সূর্যের কড়া রোদ থেকে দূরে থাকতে হবে।

  • পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে হবে

আমাদের যাদের মুখে ব্রণ রয়েছে তারা বেশি বেশি পানি খাওয়ার চেষ্টা করব। প্রতিদিন পরিমান মত পানি খেতে পারলে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। তাই যাদের মুখে ব্রণ রয়েছে তারা প্রতিদিন ২-৩ লিটার পানি খান। কারণ শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলে মুখে ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

  • প্রতিদিন পরিমাণমত ঘুম যেতে হবে

আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা রাত জেগে মোবাইল টিপে। এতে করে  তাদের রাতে ঘুমের পরিমাণ কমে যায়, যার জন্য মুখে ব্রণ হওয়া শুরু করে। এজন্য রাতে পরিমাণমতো ঘুম যেতে হবে বেশিক্ষন রাত জেগে মোবাইল টিপা যাবে না।

  • ধূমপান করা থেকে দূরে থাকতে হবে

ধূমপান করার ফলে মুখে ব্রণ এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, ধূমপান আমাদের শরীরের বিতর অনেক রকম ক্ষতি করে। আবার ধূমপানের কড়া দুয়া আমাদের মুখের ব্রণ বৃদ্ধি করে।

তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ দূর করার উপায়

যাদের তৈলাক্ত ত্বক তারা সবচেয়ে বেশি ব্রণের সমস্যায় ভুগে। কারণ তাদের মুখে ধুলাবালি বেশি লেগে থাকে যার ফলে তাদের মুখের ছিদ্র গুলো ভরে যায় এবং ব্যাকটেরিয়ার জন্ম নেই যার ফলে মুখের ব্রণ হওয়া শুরু করে ।

তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য লেবুর রস খুব কার্যকরী। এজন্য আপনাকে ১ কাপ লেবুর রসের সাথে সমপরিমাণ মধু নিয়ে ভালোভাবে মিস করে সারা মুখে লাগিয়ে দিতে হবে। তার ১৫-২০ মিনিট পর ভালোভাবে মুখ পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। এইভাবে সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন ব্যবহার করতে হবে।

তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ দূর করার জন্য দই খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কারণ মুখের তৈলাক্ততা দূর করে এবং মুখকে কোমল রাখতে সাহায্য করে। এর জন্য আপনাকে ১ টেবিল চামচ দইয়ের সাথে দুই চামচ বেসন, সামান্য পরিমাণ মধু ও ১ চিমটি হলুদের গুঁড়া দিয়ে ভালোভাবে পেস্ট বানিয়ে ফেলতে হবে। এরপর সমস্ত মুখে লাগিয়ে নিতে হবে, লাগানোর ১৫-২০ মিনিট পর মুখ ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে বলতে হবে।

এই নিয়মগুলো অনুসরণ করলে মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে এবং ব্রণের দাগ ও ব্রণ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

লেবু দিয়ে ব্রণ দূর করার উপায়

লেবু ব্রণ দূর করার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী একটি উপাদান। মুখে তৈলাক্ততা বেড়ে গেলে মুখে ব্রণ হওয়া শুরু করে। লেবুর মধ্যে যে সাইট্রিক এসিড রয়েছে সেটি তৈলাক্ততা কমিয়ে মুখের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে, যার ফলে আমরা ব্রণ থেকে রক্ষা পায়।

এজন্য আপনাকে একটি সতেজ লেবু নিয়ে ৪-৫ টুকরো করে কেটে রজ গুলোকে ঢলে ঢলে  মুখে লাগিয়ে দিতে হবে। এর ১২-১৫ মিনিট পর মুখ ভালো ভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে সাপ্তাহে ৪ দিন করুন, দেখবেন আপনার মুখের ব্রণ গুরু মিশে যাবে এবং ব্রণের দাগ গুলো উঠে যাবে।

ব্রণের দাগ দূর করার উপায়

অনেক লোক রয়েছে যাদের ব্রণ উঠার পর ব্রণ চলে গেছে কিন্তু তাদের মুখের গর্ত দাগ গুলো রয়ে গেছে এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেকে অনেক রকম ফেসওয়াশ ব্যবহার করছে কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না। এ জন্য আপনাদেরকে প্রাকৃতিক নিয়মে ব্রণের দাগ ও গর্ত গুলো দূর করার চেষ্টা করতে হবে।

ব্রণ, ব্রণের দাগ ও গর্ত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য লেবুর রস খুব কার্যকরী। এজন্য আপনাকে লেবুর রসের সাথে সামান্য পরিমাণ গোলাপজল মিশিয়ে মুখে লাগাতে হবে।

শসার রস ব্রণের দাগ দূর করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য আপনাকে শসার রস লাগানোর ১২ মিনিট পর মুখ ভালোভাবে কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।

বেকিং সোডার সাথে সামান্য পরিমাণ পানি মিশিয়ে ব্রণের দাগ এর মধ্যে লাগালে ব্রণের দাগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এজন্য আপনাকে সকাল ও রাতে লাগাতে হবে। তবে মনে রাখবেন বেকিং সোডার সাথে পানি মিশিয়ে লাগানোর পর যখন শুকিয়ে যাবে মুখ ভালোভাবে দুয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।

ব্রণের দাগ সারাতে তুলসীপাতার রস খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

ব্রণ দূর করার ঔষধ এর নাম

মুখের ছিদ্র গুলো যখন ময়লা দিয়ে বন্ধ হয়ে যায় তখন আমাদের ওই স্থান গুলোতে তেল জমা হয়ে ব্রণের সৃষ্টি হয়। যেহেতু ব্রণ সৃষ্টি হওয়ার কারণ হচ্ছে তেল, এজন্য আমরা যে ক্রিম ব্যবহার করব সেটি হতে হবে অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার। আর এটি হচ্ছে ছেলে ও মেয়েদের ব্রণ দূর করার ঔষধের নাম।

আমাদের শেষ কথা

ব্রণ একটা বিশেষ সময়ে সবার উঠার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু যারা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে তাদের ব্রণ উঠার সম্ভাবনা কমে যায়।

আর যাদের ব্রণ রয়েছে তারা ব্রন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য উপরের এই নিয়মগুলো অনুসরণ করতে পারেন। এই নিয়মগুলো আপনি ব্রন থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে কার্যকরী নিয়ম। এ নিয়মগুলো অনুসরণ করলে আপনি ব্রণ, ব্রণের দাগ ও ব্রণের গর্ত থেকে মুক্তি পাবেন

আরো জানুন:-

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url