অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম এবং অপকারিতা

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম এবং অপকারিতা


আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে অর্জুন গাছ সম্পর্কে শুনেছে কিন্ত এই গাছের ছালের উপকারিতা সম্পর্কে তাদের কোন ধারনা নাই। তাই আজ আমরা
অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব।

অর্জুন গাছের বিজ্ঞানিক নাম হল টার্মিমিনেলিয়া অর্জুন। প্রধান কিছু উপকারী গাছের মধ্যে এটি একটি। এই গাছের অনেক উপকারিতা রয়েছে, হৃদরোগসহ আরো অনেক রোগের জন্য এই গাছের ছালের ব্যবহার করা হয়।

অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

অর্জুন গাছের ছাল একটি প্রাকৃতিক ঔষধি যা বিভিন্ন উপকারিতা সম্পন্ন করে। অর্জুন গাছের ছাল মুখ্যতঃ ত্বক সম্পর্কিত সমস্যার জন্য ব্যবহৃত হয়। অর্জুন গাছের ছাল হাইপারটেনশন, প্যানক্রিয়াটিটিস, কলেস্টেরল ও ডায়াবেটিস মতো অনেক রোগে উপকারী হতে পারে। এছাড়াও অর্জুন গাছের ছাল যদি নিয়মিতভাবে খেয়ে থাকা হয় তবে এটি সম্পূর্ণ শক্তিশালী একটি প্রাকৃতিক ঔষধি হিসেবে কাজ করতে পারে।

প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে অর্জুন গাছের ছালের ব্যবহার হচ্ছে। কারণ এই গাছের ছালের ব্যবহারের মাধ্যমে অনেকে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছে।

এখন আমরা অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব-

  • হজম ক্ষমতা বাড়ায়

অনেক লোক আছে যাহাদের হজম ক্ষমতা খুব কম। আর এর জন্য তাদের ডায়রিয়া বা অন্যান্য পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই তারা প্রতিদিন ৩০-৪৫ গ্রাম অর্জুন গাছের ছাল খেতে পারেন। কারণ অর্জুন গাছের ছাল হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।

  • হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণ করে

যারা হূদরোগে আক্রান্ত তারা যদি অর্জুন গাছের ছাল দিয়ে অর্জুন চা বানিয়ে খায় তাহলে তাদের হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অর্জুন গাছের ছাল হৃদরোগের ঔষদ হিসাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। DOS থেরাপি অনুযায়ী অর্জুন ফল দেখতে মানবদেহের হৃদপিন্ডের মত, তাই অর্জুনকে হৃদরোগের মহৌষধ বলা হয়।

  • মুখ, জিহ্বা ও মাড়ির রক্ত ক্ষয় বন্ধ কর

অনেক লোক আছে যাদের মুখ,জিহ্বা ও মাড়ির থেকে মাঝেমধ্যে রক্ত পড়া শুরু করে। তাহারা যদি অর্জুন চা বানিয়ে খায় তাহলে তাদের মুখ,জিহ্বা ও মাড়ির থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।

  • রক্ত আমাশয় ভালো করে 

আমাদের মধ্যে অনেকের রক্ত আমাশয় রয়েছে তাহারা যদি প্রতিদিন ৫-৬ গ্রাম অর্জুন গাছের ছাল ছাগলের দুধের সাথে মিশিয়ে খায় তাহলে তাদের রক্ত আমাশয় ভালো হবে।

  • যৌন সমস্যা দূর করে

যাদের যৌন সমস্যা রয়েছে তারা যদি প্রতিদিন এক কাপ দুধের সাথে ৪-৫ গ্রাম অর্জুন গাছের ছাল মিশিয়ে খায় তাহলে তাদের যৌন সমস্যা ভালো হবে।

  • কানের ব্যথা ভালো করে

যাহাদের কানে ব্যথা রয়েছে তারা যদি কানের মধ্যে অর্জুন গাছের পাতার রস বানিয়ে দুই ফোঁটা করে দেয় তাহলে তাদের কানের ব্যথা ভালো হয়ে যাবে।

  • ক্ষত বা ঘা ভালো করে

আমাদের শরীরের কোথাও ক্ষত বা ঘা দেখা দিলে যদি আমরা ওই ক্ষতস্থানে অর্জুন গাছের ছালের রস ব্যবহার করি তাহলে তা খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।

  • মুখের ব্রণ দূর করে

আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যাদের মুখের ব্রণের কারণে তাদের চেহারা খুব ফ্যাকাশে দেখায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য তাহারা অর্জুন গাছের ছালের গুড়ার সাথে মধু মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারে এতে করে তাদের এই সমস্যা খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে। এছাড়াও এটি মেছতার দাগ মুছে ফেলতে সাহায্য করে।

  • উচ্চ রক্তচাপ কমায়

অর্জুন গাছের  বাকল, লিপিড ট্রাইগ্লিসারাইড স্তর হ্রাস করার মাধ্যমে কোলেস্টেরল হ্রাস করে যার ফলে রক্ত চলাচলে বাধা দূর হয়। এজন্য এক চামচ অর্জুন গাছের ছালের পাউডার দুই গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে এক গ্লাস পরিমাণ হওয়া পর্যন্ত গরম করতে হবে তারপর এগুলো সকাল-রাতে পান করতে হবে। এতে করে শরীরে কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমে যাবে এবং বন্ধ ধমনী খুলে যাবে।

  •  চুলের মান উন্নত করে

অর্জুন গাছের ছালের রস চুলে লাগালে চুলের গোড়া মজবুত হয়। চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং চুল সাদা থেকে কালো করে। চুলের মান উন্নয়নের জন্য অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা ব্যাপক।

  • অতিরিক্ত মেদ কমায়

যারা অতিরিক্ত মেদের সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রতিদিন সকাল ও রাতে অর্জুন গাছের ছালের মিশ্রন পান করলে অতিরিক্ত মেদ কমে যাবে। আর এর ফলাফল এক মাসের মধ্যে পাওয়া যায়।

  • ত্বকের সমস্যা দূর করে

ত্বকের সমস্যা দূর করতে অর্জুন গাছের ছাল ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এজন্য আপনাকে অর্জুন গাছের ছাল, বাদাম, হলুদ এবং কর্পূর সমান পরিমাণ মিশিয়ে, পিষ্ট করে ত্বকের মধ্যে লাগাতে হবে। এর ফলে আপনার ত্বকের দাগগুলি দূর হবে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।

  • প্রস্রাবের বাধা দূর করে

অর্জুন গাছের ছাল প্রস্রাবের বাধা দূর করতে সাহায্য করে। এজন্য আপনাকে অর্জুন গাছের ছাল বেটে দুই গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে গরম করে প্রতিদিন ২ বার করে খেতে হবে। এই নিয়ম করে খেলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া ও বাধা দূর হবে।

অর্জুন গাছের ছবি

অর্জুন গাছের ছবি

আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা অর্জুন গাছ চিনেনা, তাদের জন্য অর্জুন গাছের ছবি দেওয়া হয়েছে। অর্জুন গাছের পাতা দেখতে অনেকটা পেয়ারা গাছের পাতার মতো, কিন্তু এর পাতাগুলো দেখতে আরো বড়।

অর্জুন গাছ অর্থ

অর্জুনকে অন্যভাবে Tarminalia arjuna বলে। সম্পর্কিত শব্দ: অর্ক, অর্কপত্র, অর্কবৃক্ষ, অর্গল, অর্ঘ অর্ঘ্য।

অর্জুন গাছ বহুবিদ্যমান একটি বৃক্ষ যা হিমালয় এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বৃদ্ধি করে। এটি একটি বৃক্ষ যা উচ্চতা ও ফলস্থল উভয় দিকেই বৃদ্ধি করতে পারে এবং বিভিন্ন ধরণের সমস্যার জন্য চিকিত্সার উপকারিতা দেয়। অর্জুন গাছের মধ্যে সেবকপত্রিকা সহ বিভিন্ন পার্ট রয়েছে, যা প্রথমত ঔষধীয় গুণ সম্পন্ন হলেও এর সাথে আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে।

অর্জুন গাছের বারকোড হল টারমিনালিয়া আরজুনা যা রক্তনলীতে রক্তচাপ কমানোর জন্য উপকারী। এছাড়াও অর্জুন গাছের ছাল একটি প্রাকৃতিক স্বাস্থ্য পণ্য যা অস্থি স্বাস্থ্য, ডায়াবেটিস এবং হাইপারটেনশন মতো বিভিন্ন রোগে উপকারী হতে পারে।

অর্জুন গাছের ছালের রসের উপকারিতা

অর্জুন গাছের ছালের রস বিভিন্ন উপকারিতা রাখে। একটি কমন উপকারিতা হলো পুরো গাছটির উপকারিতা প্রাপ্ত করতে এর ব্যবহার করা। অর্জুন গাছের ছালের রসে কিছু প্রধান উপকারিতা নিচে দেওয়া হলো:

  • ঔষধীয় গুণ: অর্জুন গাছের ছালের রসে বিভিন্ন ঔষধীয় গুণ থাকে। এটি এন্টিব্যাক্টেরিয়াল, অ্যান্টিফ্ল্যাটুলেন্ট, অ্যান্টিপাইরেটিক, আন্তিক্যমূলক এবং উল্লেখযোগ্য প্রতিশতক। এর ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন চিকিৎসাগুলিতে যেমন কুষ্ঠরোগ, জ্বর, পাচন সমস্যা, প্রতিশত, বস্ত্রাগত সমস্যা ইত্যাদি সমাধানে।
  • হৃদয়ের স্বাস্থ্যকর উপকারিতা: অর্জুন গাছের ছালের রসে অন্যতম উচ্চ পরিমাণে স্টেরলিন আছে, যা হৃদয় ও কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যকে ভালো করে। এটি রক্তনালীর সম্পৃক্ত অংশে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং হৃদয় রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • পাচনায় সাহায্য: অর্জুন গাছের ছালের রসে অধিক পরিমাণে টানিন থাকে, যা পাচনায় উপকারী। এটি পাচনাতন্ত্র উন্নত করে এবং পেটের অস্থির পারখানো প্রতিস্থাপন করে। এছাড়াও এটি ডায়ারিয়া ও কবজি সমস্যাগুলির জন্য কার্যকরী হতে পারে।
  • রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ: অর্জুন গাছের ছালের রস রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী হতে পারে। এটি রক্তনালীতে রক্তচাপ ও রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করে এবং একটি সুস্থ হৃদয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি রক্তশুদ্ধির ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং রক্তে পানি বিলম্বন করে যা রক্তের স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
  • মস্তিষ্ক স্বাস্থ্য: অর্জুন গাছের ছালের রসে উচ্চ পরিমাণে অন্যান্য উপাদান যেমন গালিকসিনোলিক এসিড, সফলিনিক এসিড ইত্যাদি থাকে যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করে। এই উপাদানগুলি মানসিক তন্দ্রা, ডিপ্রেশন, চিন্তা ও মনের অবস্থার উপর প্রভাব ফেলে এবং মনোবিজ্ঞানিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
  • ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য: অর্জুন গাছের ছালের রস উচ্চ পরিমাণে বিটাক্যারটেন থাকে যা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যে উপকারী। এটি স্বাস্থ্যকর চর্মরোগ, ক্যান্সার, অস্থি স্থাপন, ওজন নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সমস্যাগুলির জন্য বিশেষভাবে কার্যকরী হতে পারে।

সাধারণত এই রসের ব্যবহার করা হয় উচ্চমাত্রায় কোন রোগ বা সমস্যা সমাধানে এবং স্বাস্থ্য উন্নতির জন্য।

অর্জুন গাছের ছালের অপকারিতা

আমাদের ইতিমধ্যে অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা সম্পর্কে ধারণা হয়ে গেছে এখন আমরা এর অপকারিতা সম্পর্কে জানব। আমাদের যে কোন বিষয়ের উপকারিতার পাশাপাশি এর সাইডএফেক্ট সম্পর্কে ধারণা নেওয়া প্রয়োজন। কারণ হয়তো আমাদের এমন কোনো সমস্যা রয়েছে যার কারণে আমরা এই  উপকারী গাছ ব্যবহার করতে পারব না।

এখন আমরা অর্জুন গাছের ছালের অপকারিতা সম্পর্কে জানব –

অর্জুন গাছের ছাল বিভিন্ন প্রকার মেদ বা অন্যান্য সমস্যার জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে একে নিয়মিত খেতে হলে বা অতিরিক্ত মাত্রায় নেওয়া হলে কিছু ক্ষতিকর দিক থাকতে পারে। যেমন অনেক মানুষ এর খাবার হিসাবে ব্যবহার করে থাকেন, তবে অধিক মাত্রায় খেলে একটি পরিষ্কার বা বমির ব্যাথা হতে পারে। এছাড়াও কিছু মানসিক সমস্যা হতে পারে, যেমন বিপদজনক চিন্তা, বা কোনো ধরনের পরিস্থিতির উপর অসুবিধা তৈরি হতে পারে।

গর্ভবতী মহিলাদের অর্জুন গাছের ছালের ব্যবহার থেকে বিরত রাখতে হবে। কারণ অর্জুন গাছের ব্যবহার গর্ভবতী মহিলাদের অনেক ঝুঁকি বাড়ায়, তাই তাদেরকে এই গাছের ছাল  ব্যবহারে সর্তকতা বজায় রাখা প্রয়োজন।যাদের সুগার সমস্যা রয়েছে তারা অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহারে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ অর্জুন গাছের ব্যবহার সুগার রোগীদের সুগার আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে।

তবে সাধারণত অর্জুন গাছের ছালের কোনো বিশেষ অপকারিতা পাওয়া যায় না। তাই যদি সম্ভব হয়, তবে নির্দিষ্ট মাত্রায় এটি ব্যবহার করা উচিত। যদি কোন অস্থি বা মেদ সমস্যা থাকে তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আমাদের শেষ কথা

আজকে আমরা অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করলাম। আপনারা যদি এই নিয়ম অনুযায়ী অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করেন তাহলে আপনারা এই গাছের ছাল থেকে অনেক উপকৃত হবেন।

অর্জুন গাছের ছাল প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদ ঔষধ হিসেবে অনেক রোগের জন্য ব্যবহারিত হচ্ছে। তাই আপনারা বেশি বেশি এই গাছের ছালের ব্যবহার করতে পারেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url