চুলের খুশকি দূর করার উপায়- চুলের খুশকি দূর করার ১০টি টিপস
ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে অনেকে চুলের খুশকির সমস্যায় ভুগছে তাই আজকে আমরা চুলের খুশকি দূর করার উপায় নিয়ে কন্টেন্ট তৈরি করেছি। আমাদের কনটেন্টটি শেষ পর্যন্ত পড়লে চুলের খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারবেন।
শীতের সময় চুলে খুশকির পরিমাণ বেড়ে যায়। এজন্য এই সময় চুলের প্রতি বাড়তি যত্নশীল হওয়া দরকার। খুশকির জন্য দায় হচ্ছে চুল ঝরা, রুক্ষ চুল, বিভিন্ন ধরনের স্ক্যাল্প ইনফেকশন।
চুলের খুশকি থেকে বাঁচার জন্য আমরা বাজার থেকে যে শ্যাম্পু ও লোশন নিয়ে থাকি সেগুলিতে বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক উপাদান থাকে যা অনেক সময় আমাদের চুলের ক্ষতি আরো বাড়িয়ে দেয়।
চুলের খুশকি দূর করার ১০টি টিপস
এখন আমরা চুলের খুশকি দূর করার উপায় গুলো সম্পর্কে জানব।
১) নারকেল তেল দিয়ে চুলের খুশকি দূর করার উপায়
নারকেল তেল খুশকির প্রকোপ কমাতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি আমাদের চুলের গোড়া মজবুত করে খুশকি এবং স্ক্যাল্প ইনফেকশনের সম্ভাবনা কমায়। এজন্য আপনাকে সপ্তাহে কমপক্ষে ২ বার নারকেল তেল চুলের গোড়ায় মালিশ করতে হবে।
২) লেবু দিয়ে চুলের খুশকি দূর করার উপায়
প্রাচীনকাল থেকে খুশকির সমস্যা সমাধানের জন্য লেবুর রস ব্যবহার করা হচ্ছে। আর এটি একটি সহজলভ্য যা সব সময় বাজারে পাওয়া যায়।
লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড মাথার ত্বকের অতিরিক্ত সেবোরেইক ডারমাটাইটিস বা যে তৈলাক্ত ভাব থাকে তাকে দূর করে দেয়। এছাড়াও এটি মাথার ত্বকের চুলকানি কমায় এবং পি.এইচ এর ব্যালেন্স ঠিক রাখে।
এজন্য আপনাকে ২ টেবিল চামচ লেবুর সাথে এক টেবিল চামচ পানি অথবা নারিকেল তেল মিশিয়ে মাথায় ভালোভাবে ম্যাসেজ করতে হবে। এরপর ৯-১০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। চিরতরে খুশকি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সপ্তাহে দুই বার করে ২-৩ মাস ব্যবহার করতে হবে।
৩) মেথি দিয়ে চুলের খুশকি দূর করার উপায়
মেথি ব্যবহারের ফলে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং চুলের খুশকি হওয়া বন্ধ হয়। এজন্য মেথি রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে বেটে ফেলতে হবে। তারপর বেটে নেওয়া মেথি গুলোকে চুলের গোড়ায় ভালোভাবে মালিশ করতে হবে। ঘন্টাখানেক পর মাথা ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে প্তাহে দু’বার মেথি-মালিশ করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়।
৪) নিমপাতা দিয়ে চুলের খুশকি দূর করার উপায়
প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে নিমপাতার সর্ব রোগের গুণের কথা উল্লেখ রয়েছে। নিম পাতা দিয়ে চুলের খুশকি দূর করার উপায়। নিমের এন্টি ফাংগাল গুণ খুশকির প্রকোপ কমাতে খুবই কার্যকর।
এজন্য নিম পাতার পেস্ট তৈরি করে গোসল করার আধা ঘন্টা আগে লাগাতে হবে। এছাড়াও নিম পাতা এক মগ পানিতে ফুটিয়ে তা ঠান্ডা করেগোসলের মাথায় ঢেলে দিতে হবে এতে করে চুল খুশকি থেকে মুক্তি পাবে।
৫) আমলকি দিয়ে চুলের খুশকি দূর করার উপায়
চুলের খুশকি দূর করতে আমলকি খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। প্রাচীনকাল থেকে চুলের খুশকি দূর করার জন্য আমলকির ব্যবহার হচ্ছে। এটি সেবোরেইক ডারমাটাইটিস বা তৈলাক্ত ভাব হ্রাস করে মাথার ত্বকের সুরক্ষা প্রদান করে।
আমলকিতে ধাকা ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ডান্ড্রিয়াম আক্রমণে বাধা দেয় ও চুলের খুশকি করতে সাহায্য করে। আমলকিতে থাকা উপাদানগুলো চুলের কন্ডিশনারের কাজ করে।
আমলকি দিয়ে চুলের খুশকি দূর করার উপায় কি ?
আমলকি দিয়ে মাথার খুশকি দূর করতে হলে আপনাকে ২ টেবিল চামচ আমলকির রসযুক্ত পেস্ট মাথায় লাগাতে হবে। এর ৩০ মিনিট পর মাথা ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে আমলকির রসযুক্ত পেস্ট সপ্তাহে দুই বার লাগাতে হবে।
৬) টকদই দিয়ে চুলের খুশকি দূর করার উপায়
চুলের খুশকি দূর করতে টক দই সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। যারা চুলের খুশকি দূর করার উপায় খুঁজছেন তারা এক কাপ টক দই নিয়ে মাথার চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিবেন। তার ১৫ মিনিট পর মাথা শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। এভাবে সপ্তাহে ৩ দিল করুন ভাল ফলাফল পাবেন।
টক দই এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান মাথার ত্বকে ফাঙ্গাস কমাতে সাহায্য করে যার ফলে চুলের খুশকি দূর হয়। বিশেষ করে যে দিকটি খেয়াল রাখবেন সেটি হচ্ছে টক দই যেন বেশি পুরাতন না হয়।
৭) অ্যালোভেরা দিয়ে চুলের খুশকি দূর করার উপায়
ত্বকের যত্নের জন্য অ্যালোভেরার রস প্রাচীন কাল থেকে ব্যবহার হচ্ছে। আর এতে থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টি ফাংগাল উপাদান মাথার ত্বকের র্যাশ ও চুলকানি কমাতে সাহায্য করে। এটি চুলের খুশকি সমস্যা সমাধান করে এবং চুলের শুষ্ক ভাব দূর করে, যার ফলে চুল হয় কোমল ও মজবুত।
এজন্য আপনাকে অ্যালোভেরার রস মাথায় লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট পর মাথা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এইভাবে ভালো ফলাফলের জন্য সপ্তাহে ৫-৬ দিন ব্যবহার করুন।
৮) টি ট্রি অয়েল দিয়ে চুলের খুশকি দূর করার উপায়
টি ট্রি অয়েল একটি এন্টি ফাংগল এবং এন্টি ব্যাক্টেরিয়াল গুণ সম্পন্ন তেল যা অল্প টাকার মধ্যে বাজারে পাওয়া যায়। আর এই তেলের এন্টিসেপটিক বৈশিষ্ঠ্যের কারণে ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ততা দূর করে।
যাদের একজিমার কারণে চুলে খুশকি হয়ে থাকে তারা টি ট্রি অয়েল ব্যবহার করলে সবচেয়ে বেশি ভালো ফলাফল পাবেন। কারণ একজিমা সারাতে এটি জিংক অক্সাইড ও ক্লোরেটাসোন বিউটারেটর চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর।
টি ট্রি অয়েল নিয়মিত ব্যবহার করলে হেয়ার ফলিকল ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়, ফলে চুলের গোড়া শক্ত হয় ও চুল লম্বা হয়। স্কাল্পে খুশকি হলে শ্যাম্পু করার পূর্বে পরিমাণ মত চুলের গোড়ায় ভালোভাবে ম্যাসেজ করলে ভাল ফলাফল মিলবে।
৯) জলপাই তেল দিয়ে চুলের খুশকি দূর করার উপায়
জলপাই তেলের মধ্যে প্রাকৃতিক ও ময়েশ্চারাইজার গুণ বিদ্যমান। এই তেল ব্যবহারের ফলে চুল খুশকি থেকে মুক্তি পায়। এই তেল নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনাকে অবশ্যই শ্যাম্পু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
১০) আপেল সাইডার ভিনেগার দিয়ে চুলের খুশকি দূর করার উপায়
ভিনেগার আমাদের সবার পরিচিত একটি উপাদান। আর মাথার ত্বকের জন্য আপেল সাইডার ভিনেগার এন্টি ফাংগাল হিসেবে ভালো কার্যকর। এই ভিনেগার চুলকানি রোধে মৃত কোষ সরাতে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া এটি ত্বকের পি এইচ ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
পানি ৩:১ আপেল সাইডারে ভিনেগার ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর আপনাকে মাথার চুলের ত্বকের মধ্যে ভালভাবে লাগিয়ে নিতে হবে। এভাবে সপ্তাহে ২-৩ বার লাগাতে হবে। পানির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলতে হবে।
চুলে খুশকি হওয়া, চুল পড়ে যাওয়া, চুলের গোড়া ভেঙ্গে যাওয়া এগুলো এখন নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের একটু যত্ন এবং মনযোগ এসব ব্যাপার দূর করতে পারে নিমিষেই। উপরের ১০ টি উপায় ব্যবহার করে, যে কেউ এই সমস্যা সহজেই দূর করতে পারে। কিন্তু এগুলো ব্যবহারের সময় আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে এবং খেয়াল করতে হবে কোন উপায়টি আপনার নিজের চুলের জন্য সবচেয়ে উপকারী হবে।