পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার সঠিক নিয়ম
অনেক লোক আছে যারা পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার সঠিক নিয়ম জানেনা। এজন্য আজকে আমরা পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার সঠিক নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব।
অনেক লোক আছে যারা পড়তে বসলে পড়ায় মন বসাতে পারেনা, কারণ পড়তে বসলে তাদের সারাদিনের চিন্তাভাবনা মাথায় এসে পড়ে। অনেকে আছে যারা পড়তে বসলে শুধু ঘুম আসে।
আবার অনেকের পড়তে বসলে মাথা ব্যথা সহ শরীরে জ্বালা পোড়া শুরু হয়ে যায়। এজন্য আজকে আমরা এমন কিছু নিয়ম নিয়ে আলোচনা করব যে নিয়ম অনুসরণ করলে আপনিও পড়াশুনায় মনোযোগী হয়ে যেতে পারবেন।
পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার সঠিক নিয়ম
পড়াশোনা করার জন্য মনোযোগ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন মনোযোগী ছাত্র/ছাত্রী হওয়ার জন্য কিছু সঠিক নিয়ম নিম্নে দেওয়া হলোঃ
- নির্দিষ্ট সময়ে পড়াশোনা করুন:
নির্দিষ্ট সময়ে পড়াশোনা করা একজন মনোযোগী ছাত্র/ছাত্রী হওয়ার প্রথম পদক্ষেপ। একজন ছাত্র/ছাত্রীকে নির্ধারিত সময়ে শুরু করতে হবে এবং পড়াশোনার জন্য অবশ্যই নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে হবে।
- নির্দিষ্ট জায়গায় বসে পড়াশোনা করুন:
অবস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে পড়াশোনার সময় অসংখ্য বিরতি না হয়। একজন ছাত্র/ছাত্রীকে সম্ভবত একটি চাপার টেবিল এবং একটি ভালো বৈঠকের চেয়ে নির্দিষ্ট স্থান থেকে পড়াশোনা করতে ভাল লাগবে।
- বিরতি রাখুন:
বিরতি পড়াশোনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কোন বিরতি না নেওয়ার মাধ্যমে নিজেকে পড়াশোনার সময়ের থেকে সরাসরি বাদ দেওয়ার প্রবণতা হতে পারেন।
পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার উপায়
আমাদের মধ্যে অনেক লোক আছে যারা পড়াশোনা মনোযোগ দিয়ে করতে পারেনা। তাদের জন্য আজকে আমরা পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা করবঃ
- পড়ার সময় মোবাইল সাথে রাখা যাবে না
অনেক লোক রয়েছে যারা পড়তে বসলে সাথে মোবাইল নিয়ে পড়তে বসে। এর ফলে তাদের মনোযোগ মোবাইলের দিকে চলে যায়, যার কারণে তারা মনযোগ দিয়ে পড়ালেখা করতে পারে না। কারণ যে কারো সাথে মোবাইল থাকলে তার মোবাইল টিপতে মন চাইবে এটাই স্বাভাবিক। এজন্য আমরা পড়তে বসলে মোবাইল সাথে রাখা যাবেনা।
- পড়ার জন্য টেবিলে বসে থাকার চেষ্টা করা
আমাদের মধ্যে অনেক লোক রয়েছে যারা বেশিক্ষণ পড়ার টেবিলে বসে থাকতে পারেনা। যার ফলে তাদের পড়াশুনায় মনোযোগ বসে না । এজন্য প্রয়োজন পড়ার টেবিলে বসে থাকার অভ্যাস করা।
- টার্গেট নিয়ে পড়া
টার্গেট নিয়ে পড়লে পড়াশোনা করতে খুব মজা পাওয়া যায়। আমরা যখন কোন গেম খেলি তখন আমরা একটা লেভেল শেষ করার পর আরেকটা লেভেল শেষ করার চেষ্টা করি, এতে আমাদের খুব ভালো লাগে। পড়াশোনা করার সময়ও এই নিয়ম অনুসরণ করে পড়তে বসা। যেমনঃ পড়ার আগে ঠিক করে রাখার যে আজকে আমি এই পয়েন্ট গুলো শেষ করব।
- বিছানায় পড়তে বসা থেকে বিরত থাকা
আমাদের মধ্যে অনেক লোক রয়েছে যারা পড়তে বাসের সময় বিছানায় পড়তে বাসে। এর ফলে কিছুক্ষণ পর তাদের ঘুমের ভাব আসে এবং তারা পড়াশোনা থেকে মনোযোগ হারিয়ে ফেলে এবং পড়া বন্ধ করে দেয়। তাই বিছানাতে পড়তে বসা যাবে না।
- পড়তে বসলে দুশ্চিন্তা না করা
দুশ্চিন্তা আমাদের প্রধান শত্রু কারণ দুশ্চিন্তা আমাদের স্বাভাবিক থাকতে দেয়না । আর এই দুশ্চিন্তা গুলো যখন পড়ার টেবিলে পড়তে বসলে আশে তখন আমাদের পড়ালেখা একদম মন চায় না। এর জন্য পড়ালেখা করার সময় বেশি চিন্তাভাবনা মাথায় আনা যাবে না।
- নিরিবিলি স্থানে পড়তে বসা
পড়ালেখা করার সময় অবশ্যই নিরিবিলি স্থানে পড়তে বসতে হবে। নিরিবিলি স্থান পড়ালেখায় মনোযোগ বাড়িয়ে তোলে। আর নিরিবিলি স্থানে পড়তে বসলে যে কোন বিষয়ে খুব দ্রুত বুঝা যায়, কারণ তখন আমাদের ব্রেইন খুব কার্যকরী হয়ে উঠে।
নিচে পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ আরো পাঁচটি ধাপ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
পড়াশোনায় মন বসানোর ৫টি উপায়
এখন আমরা এমন ৫টি ধাপ নিয়ে আলোচনা করব যেগুলো অনুসরণ করলে আপনিও পড়ালেখায় মনোযোগ বাড়াতে পারবেন।
১. প্রতিদিনের রুটিন তৈরি করুন
পড়ালেখা করার জন্য একটি রুটিন তৈরি করুন এরপর আপনার পড়ার টেবিলের সামনে লাগিয়ে রাখুন। রুটিন তৈরি করার ফলে এটি আপনার সময়ের প্রতি সর্তকতা বাড়িয়ে দিবে। মনে রাখবেন রুটিনের মধ্যে প্রতি সাবজেক্ট পড়ার পর ১০ মিনিট বিরতি নিবেন। এই বিরতির সময় আপনি আনন্দময় কোন কাজ করতে পারেন অথবা একটু ঘোরাফেরা করতে পারেন এটি আপনার পড়ার প্রতি মনোযোগ আরো বাড়িয়ে দিবে।
২. লক্ষ্য ঠিক করুন
পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার জন্য আপনাকে লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। আপনি যদি কোন কাজের জন্য লক্ষ্য ঠিক রাখেন তাহলে আপনার ওই কাজের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাবে। এইজন্য আপনি কি হতে চান সেই লক্ষ্য ঠিক রেখে সে অনুযায়ী কাজ করুন দেখবেন আপনি সফলতা পাবেন।
৩. যে কাজগুলো আপনাকে পড়াশোনা থেকে দূরে রাখছে সেগুলো এড়িয়ে চলুন
আপনাকে অবশ্যই অবশ্যই যে কাজগুলো করার ফলে আপনি পড়ালেখা থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন সেই কাজগুলো চিহ্নিত করে সেসব কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। আমাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা সারাদিন ফেসবুক, ইউটিউব ব্যবহার করে সময় নষ্ট করছে তাহারা এইসব কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। এই ধরনের আরো অনেক কাজ রয়েছে যেগুলো আমাদের পড়ালেখায় ক্ষতি করছে তাই এসব কাজ করা বন্ধ করে দিতে হবে।
৪. ব্যায়াম ও খেলাধুলা করা
প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম ও খেলাধুলা করলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। আর শরীর ও মন ভালো থাকলে পড়াশোনা মনোযোগ সহকারে করা যায় এবং আমাদের ব্রেন খুব কার্যকারী হয়ে উঠে। এইজন্য পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার জন্য ব্যায়াম ও খেলাধুলার অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫. পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম
একজন মানুষের প্রতিদিন ৬-৮ ঘন্টা ঘুমানোর প্রয়োজন। আমাদের মধ্যে অনেক লোক আছে যারা ঘুমানোর আগে ফেসবুক, ইউটিউব দেখে অনেক রাত কাটিয়ে দেয়, এর ফলে তাদের ঠিকমতো ঘুম হয়না এবং তাদের ব্রেন শান্ত থাকে না ফলে তারা পড়তে বসলে তাদের মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার জন্য আমাদের প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম যেতে হবে।
পড়ালেখা করার সঠিক সময়
আমাদের মধ্যে অনেক লোক আছে যারা পড়ালেখা করার সঠিক সময় জানতে চাই। আসলে পড়ালেখা করার সঠিক সময় হচ্ছে আপনি যখন পড়তে বেশি ভালবাসেন অর্থাৎ যখন আপনি পড়ালেখা করলে আপনি মনোযোগ দিয়ে করতে পারবেন আপনি তখন পরেন।
তবে বেশির ভাগ লোক রাতে ও সকালে পড়তে বেশি পছন্দ করে। কারণ রাতে ও সকালে প্রকৃতির সবকিছু শান্ত থাকে। আপনি এমন জায়গায় পড়ার চেষ্টা করবেন যেখানে কোন ধরনের আওয়াজ হয়না।
সারাদিন পড়ার উপায়
জানতে চাই, সারাদিন পড়ার উপায় কি? আসলে সারাদিন কেউ করতে পারে না কেউ যদি সারাদিন পড়তে চেষ্টা করে তাহলে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে। তবে যারা বেশিক্ষণ সময় নিয়ে পড়তে পারে না তারা বেশিক্ষণ সময় দরে পড়ার জন্য পড়ার টেবিলে বসে থাকার চেষ্টা করতে হবে।
আপনাকে প্রথমে পড়ার টেবিলে প্রতিদিন ২-৩ ঘন্টা করে পড়ার চেষ্টা করতে হবে। এরপর আপনাকে ধীরে ধীরে এই সময় কে বৃদ্ধি করতে হবে। এইভাবে আপনি একটা সময় পড়ার সময় কে ৮-১০ ঘন্টার মধ্যে নিয়ে যান। এভাবে আপনি পড়ার সময় বৃদ্ধি করলে আপনার পড়ালেখায় মনোযোগ বাড়বে এবং আপনি অনেক সময় নিয়ে পড়ালেখা করতে পারবেন।
পড়ায় মন বসে না কেন
অনেকে জানতে চাই পড়ায় মন বসে না কেন? আপনার পড়ায় মন না বসার অনেক কারণ হতে পারে।আপনি যদি পড়তে বসে মোবাইল টিফেন, সারাদিনের চিন্তা ভাবনা মাথায় আনেন, পড়ালেখার জন্য নিরিবিলি স্থানে না তৈরি করেন, পর্যাপ্ত পরিমান ঘুম না জান, আপনার জীবনের লক্ষ্য ঠিক না রাখেন, প্রতিদিনের পড়ার রুটিন ঠিক না করেন এবং প্রতিদিন পরিমাণমতো ঘুম না যান তাহলে আপনার পড়ালেখায় মন বসবে না। এজন্য পড়ালেখায় মন বসানোর জন্য এসব বিষয়ের উপর খেয়াল রাখতে হবে।
বাচ্চাদের পড়াশোনায় মনোযোগী করার উপায়
বাচ্চাদের খেলাধুলা করতে বেশি পছন্দ করে এজন্য তাদেরকে খেলাধুলা করার সময় পড়ালেখা করাতে হবে। এমন ভাবে পড়ানো চেষ্টা করবেন যাতে করে বাচ্চা পড়ালেখাও করে এবং খেলাধুলার আনন্দ উপায়।
আপনি আপনার শিশুকে ছবি আঁকতে দিন এতে করে তার মেধা শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং পড়াশোনায় মনোযোগী হবে।
এছাড়াও বাচ্চাদের পড়াশোনার মনোযোগ বৃদ্ধি করার জন্য বাচ্চাদের পড়ার টেবিল সুন্দরভাবে গুছিয়ে রাখতে হবে যাতে করে বাচ্চা পড়ার টেবিলে বসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
পড়াশুনায় মনোযোগী হওয়ার দোয়া
আল্লাহকে স্মরণ করলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের ডাকে সাড়া দেয়। পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার জন্য এবং আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য আমরা আল্লাহর কাছে মন থেকে চাইবো। আল্লাহতালা চাইলে আমাদেরকে প্রচুর পরিমাণ জ্ঞান দান করতে পারেন। এজন্য আমরা বেশি বেশি নিচের দুয়াগুলো পড়ার চেষ্টা করব।
পড়াশুনায় মনোযোগী হওয়ার দোয়া..
১. ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﻻَ ﻋِﻠْﻢَ ﻟَﻨَﺎ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﻋَﻠَّﻤْﺘَﻨَﺎ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧﺖَ ﺍﻟْﻌَﻠِﻴﻢُ ﺍﻟْﺤَﻜِﻴﻢُ
বাংলা উচ্চারণ : সুবহানাকা লা ইলমা লানা ইল্লা মা আল্লামতানা, ইন্নাকা আনতাল আলিমুল হাকিম।
অর্থ : (হে আল্লাহ) আপনি পবিত্র! আমরা কোন কিছুই জানি না, তবে আপনি আমাদিগকে যা শিখিয়েছ (সেগুলো ব্যতীত) নিশ্চয় আপনিই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা। (২/৩২)
২. رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا
বাংলা উচ্চারণ : রাব্বি যিদনি ইলমা
অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন। (সুরা ত্বাহা, আয়াত : ১১৪)
তাছাড়া জিকির বা আল্লাহর স্মরণও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘…যখন ভুলে যান, তখন আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন। (সুরা কাহাফ, আয়াত : ২৪)
আমাদের শেষ কথা
আমরা আজকে পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার সঠিক নিয়ম নিয়ে আলোচনা করেছি । আশা করি এই নিয়মগুলো অনুসরণ করলে আপনি পড়ালেখা মনোযোগ সহকারে করতে পারবেন।
আসলে পড়ালেখা মনোযোগ দিয়ে করার জন্য একজন মানুষের ইচ্ছাশক্তি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ইচ্ছাশক্তি একজন মানুষকে সাফল্যের পথ দেখায়। তাই আপনাকে পড়াশুনায় মনোযোগী হওয়ার জন্য মন থেকে চেষ্টা করতে হবে।
আরো জানুনঃ-