এলার্জি কি? এলার্জিতে চুলকানি দূর করার উপায়
এলার্জি সম্পর্কে আমরা কমবেশি সবাই জেনে থাকি। আমাদের পরিচিত অনেকে এর জন্য অনেক দুশ্চিন্তায় আছে। কারণ এটি অনেকের জীবনকে কষ্টদায়ক করে তুলেছে।
এলার্জি বিভিন্ন ধরনের কারণ বসতো হয়ে থাকে। কারো নির্দিষ্ট কিছু খাবারে এলার্জি, কারো বাতাসের এলার্জি , কারো ধুলাবালিতে এলার্জি আবার কারো ফুলের রেণুতে এলার্জি হয়ে থাকে। এলার্জি শব্দটির দুটি গ্রিক শব্দ Allos ও Ergos এর সমন্বয়ে তৈরি যার অর্থ হচ্ছে পরিবর্তিত প্রতিক্রিয়া।
এলার্জি কি?
আমাদের সবার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে যা আমাদেরকে কোন ক্ষতিকর দিক থেকে রক্ষা করে। আবার কখনো কখনো আমাদের শরীরে কোনটা ক্ষতিকর আর কোনটা ক্ষতিকর নয় তা আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার সিস্টেম বুঝতে পারো না তারা আমাদের শরীরের স্বাভাবিক সিস্টেমকে অনেক সময় খারাপ মনে করে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। আর আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন বস্তুর প্রতি অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে অ্যালার্জি।
এলার্জি চিহ্নিত করার উপায়
এলার্জি আমাদের দেশের কিছু মানুষের জীবনকে অনেক অসাভাবিক করে তুলেছে। এলার্জির কারণে মানুষের হাঁচি সমস্যা, খাদ্য ও ওষুধের সমস্যা, এমনকি মানুষের শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
গরুর মাংস, গরুর দুধ, চিংড়ি মাছ, ইলিশ মাছ, ধুলাবালি, ফুলের ঘ্রাণ ইত্যাদি স্বাভাবিক কারণে যদি আমাদের শরীর চুলকাতে থাকে চামড়া লাল হয়ে যায় অথবা ফুলে উঠে তাহলে ধরে নিতে হবে আমাদের শরীরে এলার্জি রয়েছে। এলার্জি কিছু মানুষকে স্বাভাবিক এমন কিছু মানুষকে অস্বাভাবিক করে রেখেছে
এলার্জি কেন হয়?
এলার্জি যদিও আমাদের খুব পরিচিত একটা শব্দ তারপর আমরা জানিনা এটি কি কারনে হয়ে থাকে। আমাদের শরীরে বিভিন্ন কারণে এলার্জি হতে পারে। শ্বাসকষ্ট একজিমা সহ বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগের কারণে এলার্জি হয়ে থাকে।
ঘরের কোনাই জন্মানো ধুলো থেকে হাঁপানি ধরনের এলার্জি সৃষ্টি হতে পারে। ঘরে জমানো ধুলির মধ্যে মাইক নামক এক ধরনের ক্ষুদ্র জীবাণু থাকে যা আমাদের শরীরে এলার্জি সৃষ্টির জন্য অন্যতম প্রধান কারণ। শতকরা প্রায় ৬০% এর জন্য এলার্জি হয়ে থাকে। তাই আমাদের মধ্যে যারা হাঁপানি ধরনের এলার্জিতে ভুগছি তাহারা সব সময় ধুলাবালি থেকে দূরে থাকতে হবে এবং তাহাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্রকেউ দূরে রাখতে হবে।
দূষিত বাতাস, ঘরের ধুলো, ফুলের পরাগ, কাঁচা রঙ্গের গন্ধ, ধোয়া, চুনকাম, পুরানো ফাইলের ধুলো ইত্যাদি দেহে এলার্জি বিক্রিয়া করে আমাদের দেহে হাঁপানি রোগের সৃষ্টি করতে পারে। আর হাঁপানি হলে এলার্জি হওয়ার অনেক সম্ভাবনা থাকে তাই যাহাদের হাঁপানিতে এলার্জি সমস্যা হয় তাহারা এগুলো পরিত্যাগ করতে হবে।
পেনিসিলিন ও অ্যাসপিরিন এই দুটি ঔষুধ আমরা সাধারণত ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ফোড়া, মাথা ব্যাথা, জ্বর, শরীর ব্যথা ইত্যাদির জন্য খেয়ে থাকি। পেনিসিলিন ও অ্যাসপিরিন এর কারণে আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণ অ্যালার্জি সৃষ্টি হতে পারে এমনকি পেনিসিলিন বেশি ব্যবহার করলে এর প্রভাবে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এজন্য আমাদের ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ সেবন করা যাবে না। কারণ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া আমরা যদি ওষুধ সেবন করি তাহলে আমাদের অনেক সময় অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। এমনকি আমরা আমাদের জীবন কেউ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিই।
মশা, বেলেমাছি, মৌমাছি, বোলতা, ভিমরুল ইত্যাদির কামড়ে আমাদের চুলকানি থেকে শুরু করে ওই স্থান ফুলে যাওয়া এমনকি হাঁপানি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এমনকি শরীরের পশম বা ফলক আছে এমন গৃহপালিত পশু যেমন কুকুর বিড়াল ইত্যাদি এমনকি গৃহপালিত পাখি থেকে আমাদের শরীরে অ্যালার্জি হতে পারে। এই সবকিছুর কামড়ে আর্টিকোরিয়া (আমবাত) নামক চর্মরোগ হতে পারে যা আমাদের শরীরে চাকার মত ফুলে যায় এবং চুলকাতে থাকে এবং লালচে হয়ে যায়।
এলার্জিতে চুলকানি দূর করার উপায়
চুলকানি অ্যালার্জির একটি সাধারণ লক্ষণ এবং এটি বেশ অস্বস্তিকর হতে পারে। এলার্জিতে চুলকানি দূর করার উপায় এখানে দেওয়া হল:
অ্যালার্জেন এড়িয়ে চলুন: এলার্জির কারণে চুলকানি দূর করার সর্বোত্তম উপায় হল আপনার এলার্জির উদ্রেককারী অ্যালার্জেন এড়িয়ে চলা। আপনার যদি ধুলাবালি, পোষা প্রাণীর খুশকি বা পরাগ থেকে এলার্জির থাকে তবে তাদের সাথে আপনার এক্সপোজার সীমিত করার চেষ্টা করুন।
অ্যান্টিহিস্টামিন নিন: অ্যান্টিহিস্টামাইন হল ওষুধ যা এলার্জির কারণে চুলকানি উপশম করতে সাহায্য করতে পারে। তারা হিস্টামিনের প্রভাবগুলিকে অবরুদ্ধ করে কাজ করে, যা একটি রাসায়নিক যা অ্যালার্জেনের প্রতিক্রিয়া হিসাবে ইমিউন সিস্টেম দ্বারা প্রকাশিত হয়।
কোল্ড কম্প্রেস লাগান: কোল্ড কম্প্রেস প্রয়োগ করলে এলার্জিজনিত চুলকানি ত্বককে প্রশমিত করতে পারে। চুলকানি এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করার জন্য আপনি একটি স্যাঁতসেঁতে কাপড় বা ঠান্ডা জেল প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
আপনার ত্বককে ময়শ্চারাইজ করুন: আপনার ত্বককে ময়শ্চারাইজ করা শুষ্কতার কারণে সৃষ্ট চুলকানি থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করতে পারে। আপনার ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করার জন্য আপনি হাইপোঅ্যালার্জেনিক ময়েশ্চারাইজার বা প্রাকৃতিক তেল, যেমন নারকেল তেল বা জলপাই তেল ব্যবহার করতে পারেন।
ওটমিল স্নান করুন: আপনার স্নানে ওটমিল যোগ করলে এলার্জির কারণে চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে পারে। ওটমিলে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা চুলকানি ত্বককে প্রশমিত করতে পারে এবং প্রদাহ কমাতে পারে।
টপিকাল ক্রিম ব্যবহার করুন: অনেক ওভার-দ্য-কাউন্টার ক্রিম এবং মলম রয়েছে যা এলার্জির কারণে চুলকানি দূর করতে সাহায্য করতে পারে। হাইড্রোকোর্টিসোন ক্রিম এবং ক্যালামাইন লোশন দুটি পণ্যের উদাহরণ যা চুলকানি এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ভাল স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন করুন: আপনার ত্বক পরিষ্কার রাখা অ্যালার্জির কারণে চুলকানি প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। নিয়মিত আপনার হাত এবং মুখ ধুয়ে নিন এবং আপনার ত্বক থেকে যেকোন অ্যালার্জেন অপসারণ করতে ঝরনা বা গোসল করুন।
এলার্জিতে সর্বপ্রথম সমস্যা হচ্ছে চুলকানি যা আমাদেরকে স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে দেয়না এমনকি আমাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে তাই আমাদের এই চুলকানি কমাতে হলে কিছু কাঁচা অ্যালোভেরা ত্বকে লাগাতে হবে অথবা অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে হবে। এলোভেরা ত্বকে চুলকানি কমাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এলোভেরা জেল ব্যবহার করলে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট এর জন্য রেখে দিতে হবে। এতে করে অনেক দিনের জন্য চুলকানি কমানো সম্ভব।
আমরা লেবু ব্যবহার করেও চুলকানি কমাতে পারি। লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি আর ব্লিচিং এর উপাদান। আমাদের ত্বকের যেসব স্থানে চুলকানি অনুভূত হয় সেই স্থানে লেবুর রস লাগিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে যা চুলকানি কমাতে আমাদের সাহায্য করে।
এই প্রতিকারগুলি চেষ্টা করার পরেও যদি আপনার চুলকানি অব্যাহত থাকে তবে আরও মূল্যায়ন এবং চিকিত্সার জন্য আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করা উচিত।
মুখের এলার্জি কমানোর উপায়
আমাদের যে কোন ধরণের এলার্জি হলে এর থেকে প্রতিরোধের চেষ্টা করতে হবে। তাই আমাদেরকে প্রথমে যেসব কারণে আমাদের এলার্জি সমস্যা হচ্ছে সেগুলো পরিত্যাগের চেষ্টা করতে হবে। যেমন আমরা অনেক সময় সাবান ব্যবহার করে থাকি অনেকের সাবানে এলার্জি রয়েছে। আমাদের যেসব সাবানের মধ্যে রয়েছে সেসব সাবান পরিত্যাগ করতে হবে। আব্দুল সাবানের মধ্যে আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি সে সাবান ব্যবহার করতে পারি।
ত্বক অনুযায়ী একেকজনের একেক সাবান সমস্যা। যাদের সবধরনের সাবানের সমস্যা তারা সাবান ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ সাবান ব্যবহার করলে তাদের মুখে চুলকাতে চুলকাতে দাগ হয়ে যায়। চুলকানি স্থানে হাত লাগালে চুলকানি আরো বেড়ে যায়। তাই আমরা চুলকানি স্থানে বরফ লাগাতে পারি এতে করে শরীর ঠান্ডা থাকে এবং চুলকানি কমে যায় মুখের দাগ থাকলে দাগ কমাতে সাহায্য করে। আর মুখের দাগের স্থানের জন্য আমরা বাজার থেকে ক্রিম ব্যবহার করতে পারি।
মাথার এলার্জি থেকে মুক্তির উপায়
মাথার এলার্জি থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের সর্বপ্রথম মাথার তেল ব্যবহার করতে হবে। আর আমাদের নিয়মিত মাথার চিরুনি বালিশ পরিষ্কার রাখতে হবে যাতে করে আমাদের মাথায় কোনভাবে জীবাণু প্রবেশ করতে না পারে আর আমরা এলার্জি থেকে মুক্তি পেতে পারি।
এছাড়াও আমরা মাথার এলার্জি দূর করার জন্য এলোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারি। নারকেল তেল ও অলিভ অয়েল তেল ব্যবহার করলেও আমরা ভালো ফল পেতে পারি। বিশেষ করে মাথার এলার্জি কমাতে আমাদের মাতা সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।
গলায় এলার্জি থেকে মুক্তির উপায়
অনেক সময় আমরা গলা চুলকানি বা গলা ব্যথা অনুভব করে থাকি। আর এর থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের প্রথমত নুন জল দিয়ে গার্গল করতে হবে যা হবে প্রায় ২৫০ মিলি গরম পানিতে আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে তা ১০ সেকেন্ড গলায় রেখে গার্গল করে ফেলে দিতে হবে। আর এটি দিনে দুই তিনবার করতে হবে কিন্তু গলা ব্যথা করলে তা বন্ধ করে দিতে হবে।
মধু খেলে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। মধু আমাদের গলা চুলকানি কমায়। তাই ভালো ফলাফলের জন্য আমাদের প্রতিদিন সকালে এক চামচ করে মধু সেবন করা প্রয়োজন।
১২ মাসের কম কম বয়সী বাচ্চাদের কখনো মধু খাওয়ানো উচিত না, কারণ মধুতে এমন ধরনের ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা শিশুদের মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে।
চুলকানি ও গলা ব্যথার জন্য দিনে কয়েকবার চা পান করা উচিতগলায় এলার্জি থেকে মুক্তির উপায়
এছাড়াও সামান্য পরিমাণ হলুদের গুঁড়া দুধের সাথে মিশিয়ে হালকা গরম করে তা পান করতে পারেন। আমাদের প্রতিদিন কমপক্ষে 4 গ্লাস পানি পান করতে হবে। বেশি কথা বলা বা চিৎকার করা যাবে না। এবং ধূমপান ব্যবহার করা ছেড়ে দিন। এটি গলায় এলার্জি থেকে মুক্তির উপায়।
এলার্জি চিরতরে দূর করতে করণীয়
এলার্জির ভয়ে আমরা কাতরাচ্ছি আর নয় ভয়। এলার্জি থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে হলে আমাদের ১ কেজি নিম পাতা ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
এরপর শুকনো নিম পাতা গুরু গুরু করে একটি কটায় বলে রাখতে হবে। তারপর ১ চা চামচের তিন ভাগের এক ভাগ নিম পাতার গুড়া এবং এক চা চামচ ইসুবগুলের ভুষি এক গ্লাস পানিতে আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর চামচ দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে খেয়ে নিতে হবে।
এভাবে প্রতিদিন সকাল-বিকেল ও রাতে খেতে হবে। ২১ দিন পর আমরা যেকোনো ধরনের খাবার খেতে পারবো এবং এক মাসের মধ্যে আমাদের এলার্জি আর থাকবে না।
আরো জানুন;- ব্রণের সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পাওয়ার উপায়
উপসংহার
বর্তমান সময়ে এলার্জি অনেক মানুষের মধ্যে রয়েছে এলার্জি নাই এমন লোক খুব কম আছে এজন্য আজকে আমরা পুরো আর্টিকেল জুড়ে আলোচনা করেছি এলার্জি সম্পর্কে।
আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন এলার্জি কি?, এলার্জি কেন হয়? এবং এলার্জিতে চুলকানি দূর করার উপায়।