ব্ল্যাক হোল এর রহস্য এবং এর অজানা তথ্য
অনেক লোক রয়েছে যাদের ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। আবার অনেকে আছে ব্ল্যাক হোল কি তা ও জানেনা। তাই আজকে আমরা ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে আলোচনা করব।
ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের আগে তেমন কোন ধারণা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের অনেক ধারণা মিলেছে এবং তারা ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে অনেক ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। এখন আমরা ব্ল্যাক হোলের সেই সব বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা লাভ করবে।
ব্ল্যাক হোল কি
ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর একই কথা, এটি একেক জনের কাছে একেক নামে পরিচিত। বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাক হোল কে মহাকাশের দানব বলে থাকে। কারণ ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বর এর মধ্যে কোন কিছু পড়লে তা আর বের হতে পারে না।
ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর হলো মহাকাশের এমন একটি অংশ যার মধ্যাকর্ষণ শক্তি এত বেশি যে তার বিতর কোন কিছু পড়লে তা আর বাহির হতে পারেনা। এমনকি আলোর রশ্মিও এর থেকে রক্ষা পাইনা।
ব্ল্যাক হোলের আশেপাশে যা কিছু আছে সব কিছু তার নিজের দিকে টেনে নেয় এবং আকারে অনেক বড়। এর ভিতর থেকে আলো বের হতে পারে না বলে একে দেখা যায় না।

সম্প্রতি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাকহোলের একটি ছবি তুলতে সক্ষম। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, ব্ল্যাকহোলের তলদেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন। আর সেটির চারপাশে রয়েছে গ্যাস এবং প্লাজমার জ্যোতিশ্চক্র।
ব্ল্যাক হোল আবিষ্কার করেন কে

ভূতত্ত্ববিদ জন মিচেল ১৭৮৩ সালে “ডার্ক স্টার” শিরোনামে একটা গবেষণা প্রকাশ করেন যার মধ্যে তিনি বলেছিলেন ” বিপুল পরিমাণ ভর বৈশিষ্ট্য কোন বস্তু যার মহাকর্ষের প্রভাবে আলোক তরঙ্গ পর্যন্ত পালাতে পারে না” এর থেকে সর্বপ্রথম ব্ল্যাক হোলের আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু তার এই গবেষণাকে কেউ যৌক্তিক মনে করেননি, কারণ আলোর মতো কোনো জিনিসকে আটকে ফেলতে পারে এরকম ক্ষমতা কোন কিছুর হতে পারে না। তাই ব্ল্যাক হোলের গবেষণার বিষয়টি তখন বন্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু আলবার্ট আইনস্টাইন ১৯১৬ সালে তার বিখ্যাত “সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব” নিয়ে আসেন। তার এই তত্ত্বের মধ্যে স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠে যে ব্ল্যাক হোল থাকা সম্ভব। আর তখন থেকে আবার ব্ল্যাক হোল নিয়ে গবেষণা শুরু হয়।
ব্ল্যাক হোল কিভাবে তৈরি হয়
অনেকে আছে যারা ব্ল্যাক হোল কিভাবে তৈরি হয় সঠিক তথ্য জানতে চাই। যখন বড় বড় নক্ষত্রের জ্বালানি শেষ হয়ে যায় তখন নক্ষত্রগুলো সংকুচিত হয় বিস্ফোরিত হয় এবং তাদের কেন্দ্রের ভর অনেক পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যার কারণে নক্ষত্রগুলো ব্লাক হোলে সৃষ্টি হয়। ‘সম্প্রতি আমরা গ্যালাক্সি এম৮৭ এর যে ব্ল্যাক হোলের ছবি দেখেছি তা সম্ভবত ধ্বংসপ্রাপ্ত হাইড্রোজেন গ্যাসের বড় বড় মেঘপুঞ্জ থেকে সৃষ্টি হয়েছে।’
আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির মাঝখানে যে সুপার্মাসিভ ব্ল্যাক হোল রয়েছে এইটা আমাদের সৌরমন্ডল থেকে ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এটি সূর্য থেকে ৪০ লক্ষ গুণ বড়।
এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে বড় ব্ল্যাক হোল সূর্য থেকে ৪ হাজার কোটি গুণ বড়। এবং এটি আমাদের সৌরমন্ডল থেকে ১২০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।
আমাদের সবচেয়ে কাছে যে ব্ল্যাক হোল রয়েছে সেটা আমাদের সূর্য থেকে ১৩ গুন বড়। এবং এটি আমাদের সৌরমন্ডল থেকে ৩ হাজার আলোকবর্ষ দূরে।
ব্ল্যাক হোলের ভিতরে কি আছে

ব্ল্যাক হোলের নির্দিষ্ট এরিয়ার মধ্যে পড়লে কোন কিছু আর বের হতে পারে না, এই প্রক্রিয়াকে ইভেন্ট হরাইজন বলে। ব্ল্যাক হোলের ভিতরে হাইড্রোজেন গেলে সেটি আর হাইড্রোজেন থাকা না। ব্ল্যাক হোলের ভিতরে কি আছে এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকেরা সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে পারে নাই। বিজ্ঞানীরা এই বিষয়ে গবেষণা করে চলেছে।
ব্ল্যাক হোল ও কোরআন
১৪৫০ বছর পূর্বের আল-কোরআনে ব্ল্যাক হোলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে অথচ বিজ্ঞানীরা এখন প্রমাণ করছে জেট ব্ল্যাক হোল আছে এবং নটির ভিতরে কোন কিছু পরলে তা আর ফিরে আসতে পারেনা তা ধ্বংস হয়ে যায়।
১৪৫০ বসর পূর্বে পবিত্র আল-কুরআনের সূরা ওয়াকিয়ার ৭৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন ” আমি শপথ করছি সেই সব স্থানের যেখানে নক্ষত্রগুলো পতিত হয়” আমরা জানি নক্ষত্র সমূহ একমাত্র ব্ল্যাক হোলের মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে। এই থেকে আমরা বুঝতে পারি কোরআন কতটা সত্য। ৭৬ নাম্বার আয়াতে বলেন ” নিশ্চই এ এক মহা শপথ যদি তোমরা জানতে”।
সূরা তাকদীরের ১৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন” আমি শপথ করছি সেই সমস্ত নক্ষত্রের যা গোপন হয়ে যায় বা বিলীন হয়ে যায়।
এখান থেকে আমরা বুঝতে পারি আল্লাহ পাক ব্ল্যাক হোলের কথা বলেছে। এটি আমরা নিজের থেকে ভাবনা চিন্তা করলেও বুঝতে পারি কারণ বিজ্ঞানীরা বলছে যে ব্ল্যাক হোলর মধ্যে নক্ষত্র পরলে ব্ল্যাক হোল নক্ষত্র কেউ বিলীন করে ফেলে।
আমাদের শেষ কথা
বিজ্ঞানীরা সম্প্রীতির যে ব্ল্যাক হোলের ছবি তুলেছে সেটি ৮ টি টেলিস্কোপ এর মাধ্যমে তুলতে সক্ষম হয়েছে। আর এটি ছিল তাদের কাছে সেরা একটা অর্জন। তবে তারা ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে আরো জানার চেষ্টা করছে।
এখন পর্যন্ত ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে যে ধারণাগুলো দিয়েছে সেগুলো পাই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তবে এখনো ভালোভাবে কোন সঠিক ধারণা লাভ করতে পারে নাই। বিজ্ঞান এখন যে গতিতে অগ্রসর হচ্ছে আশা করি আমরা এ বিষয়ে সামনে আরো ভালোভাবে ধারণা নিতে পারবো।
আরো জানুনঃ- মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু তথ্য